বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের মামলায় অচলাবস্থায় আটকে আছে ৩৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ইতোমধ্যেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি ও সিইওদের নির্দেশনা দিয়েছে এবং চার দফা বৈঠক সম্পন্ন করেছে। মন্ত্রণালয়ের ধারণা, দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি জটিলতার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। বর্তমানে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি খেলাপি ঋণ মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
এফআইডির সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, “আমরা খতিয়ে দেখছি কেন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিটের ক্ষেত্রে অগ্রিম অর্থ জমা দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। এতে খেলাপিদের রিটের প্রবণতা কমবে এবং কিছু অর্থও আদায় সম্ভব হবে।”
তথ্যমতে, শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির মামলার মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের ১০ মামলায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ১০ মামলায় ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ১০ মামলায় প্রায় ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ আটকে আছে। এ ছাড়া সাধারণ বীমা করপোরেশন, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপুল অঙ্কের ঋণ মামলায় ঝুলে আছে।
বৈঠকের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অর্থঋণ আদালতের রায় হওয়ার পর খেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট করে মামলাগুলো দীর্ঘায়িত করছেন, যদিও আইন অনুযায়ী এ ধরনের রিট করার সুযোগ নেই। অনেক মামলার বিপরীতে একাধিক রিট হওয়ায় নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আরও জটিল হচ্ছে।
বেসিক ব্যাংকের এমডি মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, “এফআইডি যখন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নেয়, তখন আমাদের কাজ সহজ হয়। কারণ স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনুমোদন নিতে হয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, মাহিন এন্টারপ্রাইজ (১২৫১ কোটি টাকা), এফএমসি ডকইয়ার্ড (১১৭৫ কোটি), গ্লাক্সি সুয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং (১১৪৬ কোটি), রিমেক্স ফুটওয়্যার (১০৮৪ কোটি), প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম (১০৭১ কোটি) এবং মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড (১০৫৭ কোটি টাকা) দেশের শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে রয়েছে।