যশোরের ভবদহ অঞ্চলে চার দশক ধরে চলমান জলাবদ্ধতা আজও নিরসন হয়নি। পাম্প বসিয়ে পানি সরালেও জমি চাষাবাদের উপযোগী হচ্ছে না। যারা কষ্ট করে ফসল ফলান, তাদের অনেকেই ঘরে তুলতে পারেন না উৎপাদিত ধান বা সবজি। বর্ষায় অতিরিক্ত পানির তোড়ে মাঠ যেমন তলিয়ে যায়, তেমনি মাছের ঘেরও ভেসে যায় পানির সঙ্গে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এলাকার শেখর চন্দ্র সরকার একসময় কৃষিকাজ করলেও এক যুগ ধরে আর আবাদ করতে পারছেন না। কারণ, বিল থেকে পানি না সরায় জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, গ্রাম পর গ্রাম পানিতে ডুবে থাকায় জমি ফেলে অলস বসে থাকতে হচ্ছে।
ফসল ও মাছের ক্ষতির পাশাপাশি দৈনন্দিন বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যও জলাবদ্ধতায় স্থবির হয়ে গেছে। বাঁধ দিয়ে বা পাম্প বসিয়ে বাজার চালানোর চেষ্টা করলেও আশপাশের বসতি ডুবে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, এমনকি যাতায়াতের রাস্তাও অচল হয়ে পড়েছে। বহু বাসিন্দা নিজেদের বাড়িতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে। দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকার কারণে অনেক ইটের সড়ক ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, ভবদহ জলকপাট ঘিরে প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ীদের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। নদী ভরাট ও অবৈধ ঘের নির্মাণে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই দশকে নদীর প্রস্থ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও সবগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঘের ব্যবসাকে নীতিমালার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কার্যকর সমাধান হয়নি। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি প্রকল্পে ৬৬৫ কোটি টাকা খরচ হলেও সুফল মেলেনি। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার আশ্বাসে বিশ্বাস হারিয়েছেন ভুক্তভোগীরা, যারা বলছেন—ফায়দা নিচ্ছে কেবল সুবিধাবাদীরা, অথচ সাধারণ মানুষ রয়ে গেছেন বঞ্চিত।
চার দশক ধরে জলাবদ্ধতায় ভবদহ, কৃষি-মৎস্য ও জীবিকা হুমকির মুখে
- আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ০৮:৫৬:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ০৮:৫৬:১৩ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ