আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রতি ট্রয় আউন্স স্বর্ণের দাম ছুঁয়েছে ৩ হাজার ৫৩২ ডলার, যা ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়প্রবণতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা এই অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভের নীতি স্বাধীনতা নিয়ে সংশয়ও এতে প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২২ সাল থেকে প্রতি বছর এক হাজার টনের বেশি স্বর্ণ কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো, যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এ বছরও প্রায় ৯০০ টন স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বজায় থাকবে বলে ধারণা করছে কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান মেটালস ফোকাস। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ হওয়ার পর অনেক উন্নয়নশীল দেশ ডলারের বিকল্প হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সরকারি পরিসংখ্যান ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত স্বর্ণচাহিদার মাত্র একাংশ প্রতিফলিত করছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক বার্ষিক স্বর্ণচাহিদার ২৩ শতাংশ এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে—যা ২০১০-এর দশকের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।
তবে একই সময়ে অলংকার খাতে স্বর্ণের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে স্বর্ণালঙ্কার তৈরির চাহিদা ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪১ টনে, যেটি ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন। মূলত উচ্চমূল্যের কারণে চীন ও ভারতের বাজারে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মেটালস ফোকাস অনুমান করছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অলংকার উৎপাদন ৯ শতাংশ হ্রাসের পর চলতি বছর আরও ১৬ শতাংশ কমতে পারে।
অন্যদিকে খুচরা বিনিয়োগ বাজার এখনও সক্রিয়। স্বর্ণের বারের চাহিদা বেড়েছে ১০ শতাংশ, যদিও স্বর্ণমুদ্রার ক্রয় কমেছে ৩১ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, বিশেষ করে এশিয়াতে উচ্চমূল্যে আস্থা রাখার প্রবণতা এবং দীর্ঘমেয়াদে দাম বৃদ্ধির প্রত্যাশা এ খাতকে টিকিয়ে রেখেছে। চলতি বছর বৈশ্বিক নেট ভৌত বিনিয়োগ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ২১৮ টনে।
এছাড়া গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) আবারও বাজারে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে এ খাতে ৩৯৭ টন স্বর্ণ প্রবাহিত হয়েছে, যা ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ। জুন শেষে ইটিএফে মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬১৫ দশমিক ৯ টন—তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। মেটালস ফোকাস আশা করছে, ২০২৫ সালে ইটিএফে নিট বিনিয়োগ পৌঁছাতে পারে ৫০০ টনে।
— সূত্র: রয়টার্স