ভারতে এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদি সরকার নিয়ে জনমতের হাওয়া বদলাচ্ছে। সর্বশেষ মুড অফ দ্য নেশন সমীক্ষা বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে নিম্নমুখী, আর বিরোধী শিবির শক্তি সঞ্চয় করছে।
২০২১ সালে যেখানে মোদির সমর্থন ছিল ৭০ শতাংশ, ২০২৫-এ এসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদি জনপ্রিয়তা হ্রাসের ইঙ্গিত। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে এনডিএ সরকারের প্রতি সন্তুষ্টির হার কমেছে ১০ শতাংশ—যা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় সতর্ক সংকেত।
গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে। গত বছর ৪২ শতাংশ মনে করতেন গণতন্ত্র হুমকির মুখে, এবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৮ শতাংশ। একই সঙ্গে ৪৬ শতাংশের বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, আর ৪৩ শতাংশ মনে করেন রাজ্যপালরা বিরোধী দলের রাজ্যে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নেও আস্থা কমেছে—তিন বছরে ৫৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩৮ শতাংশে।
দুর্নীতি নিয়েও সরকারের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ৪৭ শতাংশ মনে করেন বিজেপি দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে ৬৬ শতাংশ কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখছেন। লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে; ৫০ শতাংশ তার কাজকে ইতিবাচক এবং ২৮ শতাংশ অসাধারণ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
অর্থনীতির প্রশ্নে মোদি সরকারের প্রতি আস্থা কমছে দ্রুত। একসময় মোদি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য থাকলেও এবার ব্যবধান প্রায় নেই—মোদি ৪৫ শতাংশ, মনমোহন ৪৩ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। সমীক্ষায় ৫৬ শতাংশ জানিয়েছেন ধনীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান, ৫০ শতাংশ বলেছেন সাধারণ মানুষ তেমন সুবিধা পাননি। ব্যবসা শুরু ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও ৫৪ শতাংশ বাধা দেখছেন।
এছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বকে প্রধান সংকট হিসেবে দেখছেন ভোটাররা। ৭২ শতাংশ বেকারত্বকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলছেন, আর ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন জীবিকা ব্যয়ের চাপ বেড়েছে, সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
সমীক্ষার সারকথা হলো—মোদি সরকারের সাফল্যের প্রতীক রয়ে গেছে রামমন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় অবকাঠামো প্রকল্প, তবে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে জনআস্থা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আসন্ন সময় ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, আর কংগ্রেসসহ বিরোধী শিবির নতুন করে শক্তি অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে।