ইসলামে ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এর মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক নফল রোজা পালনের প্রতি রয়েছে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ–এর বিশেষ তাগিদ। এই দুটি দিন শুধু রোজা রাখার জন্যই নয়, বরং তা আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য এবং আমল তুলে ধরার উপযুক্ত সময় বলেই চিহ্নিত।
রাসূল (সা.) এর আমল ও উৎসাহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ নিয়মিত সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তিনি বলেন:
❝মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয় সোমবার ও বৃহস্পতিবারে। আমি চাই, যখন আমার আমল পেশ করা হবে, তখন আমি রোজাদার থাকি।❞
(তিরমিজি, হাদীস: ৭৪৭)
অন্য হাদীসে রয়েছে:
❝সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহি নাজিল হয়েছে।❞
(মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)
কেন এই দুটি দিন গুরুত্বপূর্ণ?
আমল পেশের দিন:
সপ্তাহের এই দুই দিন ফেরেশতারা বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করে থাকেন। রোজা থাকা মানে সেই মুহূর্তে নিজেকে ইবাদতের সর্বোচ্চ স্তরে রাখা।
সুন্নাত হিসেবে প্রমাণিত:
নিয়মিত এই রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলিম সুন্নাত পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ:
সাপ্তাহিক রোজা একজনকে জিহ্বা, চোখ, কান, মন এবং প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ শেখায়।
রুহানিয়াত বৃদ্ধি:
দুনিয়ার ব্যস্ত জীবনে সপ্তাহে দুইদিনের রোজা একজন মুসলিমকে আল্লাহর স্মরণে ফিরিয়ে আনে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়তা
১) দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ, আত্মিক দূরত্ব ও গুনাহের ঘনত্ব থেকে বাঁচতে এই নফল রোজা এক শক্তিশালী আত্মিক ব্যায়াম।
২) আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও স্বল্পকালীন নিয়মিত উপবাসের উপকারিতা স্বীকার করেছে—ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন হ্রাস, মনোসংযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি।
৩)নিয়মিত এই অভ্যাস রমযানের প্রস্তুতি হিসেবেও কাজ করে।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা শুধুই একটি আমল নয়, এটি একজন মুসলিমের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের সাপ্তাহিক সুযোগ। যাঁরা আত্মশুদ্ধি, সুন্নাত পালনের সৌভাগ্য এবং রুহানিয় উন্নয়ন চান, তাঁদের জন্য এই রোজা অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী।