শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যা আগে আসামি ছিলেন, সেই সাক্ষী হিসেবে হাজির হন। মামলায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, যারা ২০২৪ সালের ওই সময়কার নৃশংসতা এবং গণহত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময়কাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও তখনকার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার অন্যতম কালো অধ্যায়। ওই সময়কার সরকার এবং ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের ওপর ভারী মাত্রার পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সহিংসতা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে এই অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রসিকিউশন পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনে।
মামলার প্রাথমিক শুনানিতে শেখ হাসিনা এবং তার দুই সহযোগীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয় ১০ জুন ২০২৫ তারিখে এবং ৩ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী এবং চিকিৎসকরা সাক্ষী হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এখন প্রসিকিউশনের রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ করছেন এবং তিনি নিজেও অভিযোগিত।
এই মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতা আন্দোলন থেকে উদ্ভূত ও এর পরের সময়কার ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘটিত সহিংসতার প্রসঙ্গে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ওই সংঘর্ষে আনুমানিক হাজারের মতো মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছিল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যেখানে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গুলিবর্ষণ সত্যতা পাওয়া গেছে।
এই প্রসঙ্গে, মামলায় অভিযুক্তরা অবরুদ্ধ রয়েছেন এবং কেউ কেউ হায়াতবন্দী বা নির্বাসনে আছেন, তবে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই মামলাটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বড় রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিচারকাজ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের আইনি ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।