জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনের তৎপরতা বেড়েছে নির্বাচন কমিশনে। ৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত সাতটি রাজনৈতিক দল নতুনভাবে নিবন্ধনের স্বীকৃতি পেয়েছে, আরও কয়েকটি দল আবেদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে নতুন দল নিবন্ধনে স্বস্তি এলেও প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরোধ এখন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের প্রতীক নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তালিকা থেকে বেছে নিতে হয়। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের ৯(খ) ধারা অনুসারে, প্রতিটি দলের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রতীক সংরক্ষিত থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এনসিপির প্রস্তাবিত প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়ে কমিশনের আপত্তি জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে—এই প্রতীকের ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি কী?
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য জেসমিন টুলি জানান, অতীতে কাদের সিদ্দিকির দল গঠনের সময়ও এমন বিতর্ক হয়েছিল। তখন ‘গামছা’ প্রতীক তফসিলভুক্ত না থাকলেও পরবর্তীতে সেটি যুক্ত করা হয়। তাঁর মতে, নতুন প্রতীক তালিকাভুক্ত করে অনুমোদন দেওয়ার নজির আগেও রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ইসি মোট ১১৫টি প্রতীক নির্ধারণ করেছে, যদিও প্রতীক বাছাই ও তালিকাভুক্তির কোনো স্থায়ী নীতিমালা এখনো তৈরি হয়নি। ফলে কোন প্রতীক যুক্ত হলো, কোনটি বাদ পড়ল—এসব সিদ্ধান্ত মূলত কমিশনের বিবেচনার ওপর নির্ভর করছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের উচিত তার সিদ্ধান্তকে স্বচ্ছভাবে ব্যাখ্যা করা। তিনি মনে করেন, প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়টি জনগণের জানার অধিকারভুক্ত। অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, ‘শাপলা’ যেহেতু জাতীয় প্রতীকের অংশ, তাই নির্বাচন কমিশন তা তালিকাভুক্ত করতে পারেনি। জাতীয় প্রতীক সংক্রান্ত ১৯৭২ সালের আদেশের ৪ ধারায় বর্ণিত—ভাসমান শাপলার পাশে ধানের দুটি শীষ, ওপরের দিকে পাটপাতা ও দুই পাশে তারা নিয়ে গঠিত প্রতীকই বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় প্রতীক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতীক বরাদ্দে কমিশনের স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি। কারণ ইসির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হলে ভবিষ্যতেও বিতর্ক এড়ানো কঠিন হবে। আর সুসংহত গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে এসব প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা অত্যাবশ্যক।
এনসিপির দাবি, ‘শাপলা’ একক প্রতীক হিসেবে জাতীয় প্রতীকের পূর্ণাঙ্গ রূপ নয়; তাই ভোটের প্রতীকে এটি ব্যবহারে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।
ডেস্ক রিপোর্ট