চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে অংশ নেওয়া প্রায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ছয় লাখেরও কম। অপরদিকে, মাদরাসা বোর্ডে ৮২ হাজার ৮০৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সফল হয়েছেন ৬২ হাজার ৬০৯ জন। গত পাঁচ বছরেও মাদরাসা বোর্ডের পাসের হার কখনো ৯০ শতাংশের নিচে নামেনি। একই দেশের একই বয়সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন বৈষম্যমূলক ফলাফল প্রশ্ন তুলছে—কেন এমন পার্থক্য?
শিক্ষার্থীদের মতামতে মিলছে ভিন্ন সুর। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করেন, মাদরাসায় পড়াশোনা তুলনামূলকভাবে কঠোর; ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই, শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদানে মনোযোগী। তবে অন্যরা বলছেন, মাদরাসার প্রশ্নপত্রে বই থেকে সরাসরি প্রশ্ন আসায় সেখানে পরীক্ষার্থীরা সুবিধা পান। বিপরীতে, এইচএসসিতে প্রশ্ন ঘুরিয়ে বা বিশ্লেষণধর্মী হওয়ায় পাসের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া, কো-কারিকুলার কার্যক্রমে কম সম্পৃক্ততাও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী রাখে বলে মত দেন কেউ কেউ।
দুই বোর্ডের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সরাসরি তুলনা না করা গেলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন, আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি প্রশ্নপত্রের কাঠামো নির্ধারণ করে, তাই মানের পার্থক্যের সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, প্রশ্নের ধরণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতেই পার্থক্য তৈরি হয়। তার মতে, মাদরাসায় বরাবরই একটি ভিন্ন পদ্ধতি অনুসৃত হয়, ফলে ফলাফল একটি নির্দিষ্ট মানে স্থিত থাকে। তিনি আরও বলেন, “মাদরাসার শিক্ষকরা অনেক সময় শুধু চাকরির জন্য নয়, ধর্মীয় দায়বদ্ধতা থেকেও পড়ান। এই মোটিভেশন ফলাফলে প্রভাব ফেলে।”
একই অভিমত ব্যক্ত করেন সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়ার প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ওবায়দুল হক। ১৭ বছর সাধারণ কলেজে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের “না পাওয়ার বেদনা” ও নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছা কাজ করে। তাই তারা পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হয়।
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষার্থী সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় সামগ্রিক পাসের হারে তার প্রভাব পড়ে। তবে তারা একমত—বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের গলদ রয়েছে, যা দূর না হলে বোর্ডভিত্তিক পার্থক্য থেকেই যাবে।
প্রসঙ্গত, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সরাসরি মেধা তালিকার ক্রম নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ধারাবাহিকভাবে বেশি: কারণ অনুসন্ধানে ভিন্ন মত
- আপলোড সময় : ২৪-১০-২০২৫ ০৫:১৩:৫৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-১০-২০২৫ ০৫:১৩:৫৪ অপরাহ্ন
ছবি সংগৃহীত
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
ডেস্ক রিপোর্ট