জুম্ম ছাত্র–জনতার ডাকা অবরোধে রাঙামাটির সাথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ ৯ উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। জরুরি সেবা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শনিবার শুরু হওয়া অবরোধ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। শহরের চেঙ্গি স্কয়ার, শাপলা চত্বর, কলেজ গেট, স্বনির্ভর, জিরো মাইলে পোস্ট বসিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ১৪৪ ধারার মধ্যে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
অবরোধ আংশিক শিথিল হলেও গতকাল দিনভর খাগড়াছড়িতে পরিস্থিতি ছিল থমথমে। জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় বলবৎ আছে ১৪৪ ধারা। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। একইসাথে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশ টহল দিয়েছে। কাউকে সন্দেহ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে গতকাল জেলার কোথাও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী নৈশকোচগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনীতে গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি পৌঁছেছে। খাগড়াছড়িতে আটকা পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। তবে অভ্যন্তরীণ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। জেলা শহরে ভেতরে সীমিত সংখ্যক ব্যাটারি রিকশা চললেও দিনমজুর ও পরিবহন শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ। এছাড়া জেলার প্রায় সবকটি হাট–বাজার বন্ধ থাকায় খাবার সংকটে পড়তে হয়েছে পাহাড়ি–বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীকে। খাগড়াছড়ি জেলা শহরে খাবার ও ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকানপাট বন্ধ ছিল।
এদিকে অবরোধের কারণে কয়েকদিন ধরে জেলা সদরে আটকে আছে বেশ কিছু পণ্যবোঝাই ট্রাক। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাকসবজি ও কৃষিপণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রাকে নষ্ট হচ্ছে ডিমসহ কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল।
এদিকে সাজেকে আটকা পড়া ৫শ ১৮ জন পর্যটককে সেনা নিরাপত্তায় সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে আনা হয়। গতকাল দুপুরে তারা খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছেন। পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যান।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উপজেলায় অবরোধের সমর্থনকারীদের অবস্থান নেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ বলেন, রোববার থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ১৪ জন আহতকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১ জনকে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
বিজিবির সংবাদ সম্মেলন : খাগড়াছড়িতে চলমান সংঘাত–সহিংসতা নিয়ে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিজিবি খাগড়াছড়ি সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম। খাগড়াছড়ি বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহর এবং স্বনির্ভর বাজার এলাকায় পাহাড়ি–বাঙালি ছাত্র–জনতার মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া এবং কয়েকটি স্থানে দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা এবং নাশকতা রোধে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। স্বনির্ভর বাজার ও চেঙ্গি স্কয়ারের আশেপাশে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতা রোধে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। ঘটনার প্রথম দিনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজিবি শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কতিপয় দুষ্কৃতকারী স্বনির্ভর বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। আমরা ধৈর্যের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে স্বনির্ভর এবং চেঙ্গি স্কয়ার এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হই। আমরা শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একসাথে বসবাস করতে চাই। আমি আপনাদের সকলকে আহ্বান করব, শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় রাখার জন্য। পাহাড়ি–বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি।