৭ সেপ্টেম্বর টেকনাফের হোটেল আল করম থেকে স্থানীয় এক সাবেক হোটেল ম্যানেজার মো. আমিন কর্তৃক অপহৃত হন পর্যটক রেজাউল করিম। তাঁকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাচারকারীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় পাহাড়ি আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিপণের দাবিতে টানা ১৩ দিনের নির্মম নির্যাতন। একপর্যায়ে অন্য পাচারকারী চক্রের কাছে তাঁকে বিক্রি করার সময় তিনি পালিয়ে এসে বিজিবি-কে পুরো ঘটনার তথ্য দেন।
রেজাউল করিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আস্তানায় দুই শতাধিক মানুষকে আটক রাখা হয়েছিল এবং সেখানে টাকার বিনিময়ে মানুষ কেনা-বেচা চলত। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হতো শারীরিক নির্যাতন। তিনি জানান, এখনো শতাধিক মানুষ বন্দি অবস্থায় থাকতে পারে, যাদের দ্রুত উদ্ধার করা প্রয়োজন।
উদ্ধারকৃত ৮৩ জনের মধ্যে ৬৬ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী, যাদেরকে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে উন্নত জীবন ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আনা হয়েছিল। স্থানীয় নয়াপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুনসহ মুন্সীগঞ্জের অমিত হাসান ও মানিক মিয়া নামের সাধারণ মানুষও প্রতারণার শিকার হয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে বন্দী ছিলেন। তারা সবাই মুক্তিপণ না দিলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার সুযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন।
রেজাউল করিমের তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ-২ বিজিবি ও র্যাব-১৫ যৌথভাবে টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়ার গহিন পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই অভিযানে পাচারকারীদের তিন রাউন্ড গুলির মুখেও কৌশল অবলম্বন করে ভুক্তভোগীদের অক্ষতভাবে উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান এবং র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া পাচারকারীরা হলেন—আবদুল্লাহ (২১), সাইফুল ইসলাম (২০) ও মো. ইব্রাহিম (২০)। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি বন্দুক, ধারালো অস্ত্র এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজিবি অধিনায়ক আশিকুর রহমান আরও জানান, এই মানব পাচার চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন হোসেন, সাইফুল ও নিজাম নামের তিন মূল হোতা। এদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু চক্রও জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে নদী ও পাহাড় থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১২ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ভয়ানক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।