বদনজর ইসলামী আকীদাহ্তে বাস্তব একটি বিষয়। কুরআন ও হাদীসে এ বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়। বদনজরের প্রভাব মানুষের শরীর, সম্পদ বা জীবনে পড়ে এবং এটি কখনো কখনো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কুরআনে বদনজরের উল্লেখ-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কিছু মানুষের হিংসা বা ঈর্ষার দৃষ্টিতে ক্ষতি আসতে পারে।
> সূরা কালম, আয়াত ৫১-৫২:
“আর নিশ্চয়ই যারা কুফর করেছে তারা যখন কুরআন শুনে তখন প্রায় তাদের চোখের দৃষ্টিতে তোমাকে আঘাত করবে, আর তারা বলে, ‘সে তো অবশ্যই উন্মাদ।’ অথচ এটা তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।”
এখানে বদনজরের প্রভাবকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
> সূরা ফালাক (১১৩:৫):
“আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আমি আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।”
হিংসা ও ঈর্ষার মাধ্যমে বদনজর সৃষ্টি হয়, তাই এ আয়াত বদনজর থেকেও সুরক্ষার দোয়া।
হাদীসে বদনজরের প্রমাণ-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বদনজর সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন।
> সহিহ মুসলিম, হাদিস ২১৮৮:
নবী ﷺ বলেছেন: “বদনজর (আল-আয়ন) সত্য।”
> সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৭৪০:
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “বদনজর সত্য, আর যদি কিছু (মানুষকে) তাকদীরের আগে অতিক্রম করতে পারতো, তবে তা হতো বদনজর।”
> মুয়াত্তা ইমাম মালিক (হাদিস ১৭৪২):
রাসূল ﷺ বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কোনো জিনিস দেখে মুগ্ধ হয়, তখন তার জন্য বারাকাহ প্রার্থনা করুক। কারণ বদনজর সত্য।”
বদনজর থেকে বাঁচার উপায়-
১. আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা
> সূরা ফালাক ও সূরা নাস (মুআওয়িযাতাইন) প্রতিদিন পড়া।
> আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা ২:২৫৫) পাঠ করা।
২. বারাকাহর দোয়া করা
> কারো সৌন্দর্য, সম্পদ বা সাফল্য দেখে “بارك الله” (বারাকাল্লাহ, আল্লাহ বরকত দান করুন) বলা।
৩. নবীর নির্দেশিত দোয়া পাঠ
> বদনজর হতে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য নবী ﷺ শিশুদের ওপর এ দোয়া পড়তেন:
أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
“আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে আশ্রয় দিচ্ছি, প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং ক্ষতিকর বদনজর থেকে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৩৭১)
৪. হাসদ ও হিংসা পরিহার করা
> অন্যের প্রাপ্ত অনুগ্রহ দেখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ঈর্ষা না করা।
বদনজর একটি বাস্তব বিষয়, যা কুরআন ও হাদীসে প্রমাণিত। তবে মুসলিমদের জন্য এর ভয় নয়, বরং আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়া ও কুরআন-সুন্নাহর আমলই হলো প্রকৃত সুরক্ষা। তাই নিয়মিত দোয়া, যিকর ও বরকাহর কথা বলা বদনজর থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।