ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবৈধ হকার, ভবঘুরে ও মাদক ব্যবসায় জড়িত সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসু সম্প্রতি যৌথভাবে পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান শেষে এই সিন্ডিকেটের তৎপরতা ফিরে আসায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
প্রশাসনের অভিযানের বিরোধিতায় বামধারার কয়েকটি ছাত্র সংগঠন হকারদের পক্ষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই মিছিলে তারা অবৈধ উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে স্লোগান তোলে। বিক্ষোভে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ বামপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও কিছু বহিরাগত অংশ নেন। ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে চাকরিচ্যুত শামীম নামের এক ব্যক্তিকেও দেখা যায়, যার বিরুদ্ধে অতীতে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক তাওসিফুল ইসলাম বলেন, এই সিন্ডিকেট কোনো নতুন ঘটনা নয়। আগেও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে মাদক ও চাঁদাবাজির প্রমাণ মিলেছিল। ডাকসু নেতারা অভিযানে বাম সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততাকে ভণ্ডামি অভিহিত করে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন। ডাকসুর জিএস এসএম ফরহাদ ফেসবুকে লিখেন, “ঢাবির অংশ শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী—কিন্তু কোনো মাদক ব্যবসায়ী বা অবৈধ হকার নয়।”
অন্যদিকে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন, “বিতাড়িত প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অনুপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে নতুন অপরাধী চক্র তৈরি হয়েছে, যারা হকারের আড়ালে মাদক ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, শনিবার রাত ১০টার দিকে তাদের একটি টিমের এক সদস্য এই সিন্ডিকেটের হামলায় আহত হন।
সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম জানান, অবৈধ দোকান ও বহিরাগত উচ্ছেদের অভিযান অব্যাহত থাকবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কোনো আপস হবে না। প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা জরুরি।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক এ ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ফেসবুকে লেখেন, সহিংসতা শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। অপরদিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ডাকসুর পদক্ষেপকে “গুন্ডামি” বলে মন্তব্য করেন। এর জবাবে ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েন—“মাদকাসক্তদের রক্ষার দায়িত্ব কোন শিক্ষক নেটওয়ার্কে লেখা আছে?”
শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, এই বিষয়ে দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক অবস্থান তাদের নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তাদের দাবি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্তত ৫০–৬০ জনের মাদকচক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, “রাজু ভাস্কর্যের নিচে হকারদের মাইকিং এখন ভয়াবহ বাস্তবতা।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতে, ঢাবির ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট