নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চিটাগাংরোডস্থ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অফিসটি এখন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। অফিসের অভ্যন্তরে কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক কলোনিতে বহিরাগতদের দখল ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাড়ছে উদ্বেগ। সরকারি বাসায় বহিরাগতদের বসবাস শুধু অনিয়মই নয়, এটি এখন অপরাধের আশ্রয়স্থলেও পরিণত হয়েছে।
কর্মচারীদের বরাদ্দকৃত এসব বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বহিরাগতদের কাছে, যাদের অনেকেই জড়িত মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। স্থানীয় সূত্র বলছে, অফিসের ভেতরে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও যানবাহন থাকা সত্ত্বেও কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অফিসটি হওয়ায় অপরাধীরা মহাসড়কে অপরাধ সংঘটনের পর দ্রুত আশ্রয় নেয় কলোনির ভাড়া নেওয়া বাসায়, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
গত ১৩ আগস্ট এ কলোনির ভেতরে সংঘটিত সাবিনা আক্তার লাকি হত্যাকাণ্ডের পর পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তিনি সওজের কর্মচারী না হয়েও এক কর্মচারীর বরাদ্দকৃত সরকারি বাসায় ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পরকীয়ার জেরে নীরব ওরফে নাজিম তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। র্যাব পরবর্তীতে নলছিটি থেকে নাজিমকে গ্রেফতার করলে কলোনির বহিরাগত ভাড়াটিয়া চক্রের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, কিছু কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পরও সরকারি বাসা ছাড়ছেন না। বরং ভাড়াটিয়াদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে ভাড়ার টাকা নিজেদের পকেটে নিচ্ছেন। কেউ কেউ এমনকি বরাদ্দ বাতিল হওয়া সরকারি বাসা অন্য কর্মচারীর কাছে “বিক্রি”ও করে দিচ্ছেন। যেমন, শ্রমিকলীগের প্রভাবশালী নেতা ও উচ্চমান সহকারী জামায়াত উল্লাহ ২৮-বি বাসাটি ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন মাস্টাররোল কর্মচারী আল-আমিনের কাছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ আরও আছে, আবাসিক কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জামায়াত উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে বাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তারা বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও বাসাভাড়ার টাকা নিজেদের কাছে রাখছেন বলে কর্মচারীদের অভিযোগ। এমনকি কয়েকজন ড্রাইভার অফিস থেকে অবৈধভাবে অন্য বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন, যার বিল দিচ্ছে সওজ বিভাগ।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। তবে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্যাহ্ মজুমদার বলেন, “বহিরাগতদের বসবাসের বিষয়টি হত্যাকাণ্ডের পর জানা গেছে। তাদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”