বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাম্প্রতিক গুম, খুন ও গণহত্যার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ৯ জন, দুইজন এখনো কর্মরত এবং বেশিরভাগই পলাতক অবস্থায় আছেন৷ এই উচ্চ-পর্যায়ের গ্রেপ্তারি উদ্যোগ দেশের বিচারিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং সেনাবাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন তুলছে।
ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ শুনানিতে জানা যায়, আটককৃতদের মধ্যে একজন কর্মরত মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন; অপর মেজর জেনারেল, কবীর আহাম্মদ পালিয়ে গেছেন এবং তিনি শেখ হাসিনার সাবেক মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ জেনারেলদের প্রায় সকলেই দেশের বাইরে পালিয়েছেন, এদের মধ্যে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন সাবেক ডিজিএফআই মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন।
এসব মামলায় মোট ২৮ জন আসামির মধ্যে অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা, পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের নামও উঠে এসেছে। দুই মামলায় মোট ২৩ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়, এছাড়াও জুলাই গণহত্যার মামলায় ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে। এখানে বিজিবির লে. কর্নেল রিদওয়ান ও মুন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আসামি রয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিফিং অনুযায়ী, ওয়ারেন্টভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, ১৫ জন কর্মরত এবং ১ জন এলপিআর-এ আছেন। যাদের মধ্যে মাত্র একজন পালিয়ে গেছেন; বাকিরা সেনা হেফাজতে৷ বিশ্লেষণভিত্তিক তথ্যে জানা যায়, হেফাজতে রয়েছেন—মেজর জেনারেল সারওয়ার হোসেন সহ সিটিআইবি, ডিজিএফআই, র্যাব এবং বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নামগুলি নিরীক্ষা করলেই স্পষ্ট—পরোয়ানা জারি হওয়া ব্যক্তিরা দেশের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও বিশেষ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
সামরিক ও গোয়েন্দা এলাকার এই উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধের এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রের বিচারিক প্রক্রিয়া, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এমন ঘটনাগুলো স্বাধীন তদন্ত ও তথ্যভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে জনস্বার্থে।