দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির পর গাজায় নিজেদের কর্তৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামাস বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর দমন অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। নিহতরা হামাসের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাস ধীরে ধীরে তাদের সদস্যদের গাজার রাস্তায় ফিরিয়ে আনছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তারা সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে গাজার দুটি নিরাপত্তা সূত্র।
গাজার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, গাজা সিটিতে হামাস বাহিনী ৩৩ জনকে হত্যা করেছে এবং সংঘর্ষে হামাসেরও ছয়জন কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরিচয় বা তারা ইসরাইলের সমর্থন পাচ্ছিল কিনা—তা প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে রাফাহ অঞ্চলে সক্রিয় হামাসবিরোধী নেতা ইয়াসের আবু শাবাব ও তার সহযোগীদের লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে হামাস। গাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শাবাবের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত এক সহযোগীকে হত্যা করা হয়েছে। হামাস তাকে ইসরাইলের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করলেও শাবাব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশধারী কয়েকজন বন্দুকধারী অন্তত সাতজনকে মেশিনগান দিয়ে গুলি করছে। ভিডিওটি সোমবার গাজায় ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেলেও, রয়টার্স এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
গত মাসেও হামাস-নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল।
একইসঙ্গে সোমবার হামাস দুই বছর আগে ইসরাইল থেকে আটক শেষ জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে। এ সময় কাসাম ব্রিগেডের সশস্ত্র সদস্যদের মোতায়েন করা হয়, যা গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের মিত্ররা হামাসকে নিরস্ত্র করার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাসের গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা রয়টার্সকে বলেন,
“গাজায় কোনো নিরাপত্তা শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। হামাস জননিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে।”
হামাস জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের হাতে তাদের অস্ত্র সমর্পণে প্রস্তুত, তবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সমঝোতা হওয়া উচিত, এতে কোনো বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থাকা যাবে না।
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক রেহাম ওউদা বলেন, হামাসের এই পদক্ষেপ মূলত ইসরাইলের সহযোগীদের ভয় দেখানো এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের প্রচেষ্টা। একইসঙ্গে তারা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নতুন সরকারে হামাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত—যা ইসরাইলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।