নাসা মহাকাশচারীরা আইএসএস-এ ভেসে ভেসে লেটুস, টমেটো ও জিনিয়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। মহাকাশে জন্মানো জিনিয়া ফুল ২০১৬ সালে স্কট কেলি মহাকাশচারীর মাধ্যমে প্রথম ফোটে এবং তা কক্ষপথে গাছপালার অভিযানের এক ইতিহাস গড়ে। পরবর্তীতে নাসা বায়ু ও পানির পুনর্ব্যবহার করে উদ্ভিদ উৎপাদন ও টাটকা খাবার সরবরাহের কার্যকর পদ্ধতি তৈরি করতে গবেষণা চালাচ্ছে।
চীনের ক্ষেত্রে, লুইউয়ান-৫০২ নামে পরিচিত গমের বীজ ২০০ মাইল উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়ে জন্মানো হয়েছে। মহাকাশের অতিমাত্রায় কসমিক রশ্মি ও কম মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবিত করে বীজের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মিউটাজেনেসিস। এর ফলে লুইউয়ান-৫০২ গম সাধারণ জাতের চেয়ে খরা-সহিষ্ণু, রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল। চীনা গবেষকরা জানাচ্ছেন, গত ৩০ বছরে তারা ২০০টির বেশি স্পেস মিউটেটেড ফসল উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ধান, ভুট্টা, তিল, আলফালফা, টমেটো ও মিষ্টি আলু রয়েছে।
মহাকাশে ফসল উৎপাদন কেবল চীনের ক্ষেত্রে সীমিত নয়। সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ১৯৮০–৯০-এর দশকে স্পেস ফুড এবং পারমাণবিক মিউটাজেনেসিস ব্যবহার করে গাজর, ক্যাপসিকাম, সূর্যমুখী এবং অন্যান্য উদ্ভিদের বীজ উন্নত করেছিলেন। বর্তমানেও মহাকাশে বীজ পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো ফসলের বৈশিষ্ট্য উন্নত করা, যেমন কম পানি ব্যবহারে বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং চরম জলবায়ুর সহনশীলতা।
নাসা সম্প্রতি আইএসএস-এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করেছে। তারা জানিয়েছে, মহাকাশে বাগান করার মাধ্যমে তারা শিখছে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি মিশনে মহাকাশচারীদের জন্য টাটকা খাবারের উৎস তৈরি করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে জন্মানো লেটুস ২০২০ সালে খাওয়ার জন্য নিরাপদ এবং এটি দীর্ঘমিশনের খাদ্য সাপ্লাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
চীনের লিউ লুজিয়াং এবং তার দল বলেন, “স্পেস মিউটাজেনেসিসে উদ্ভাবিত লুইউয়ান-৫০২ গম আমাদের কৃষি উদ্ভাবনে সফলতার গল্প। এটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষযোগ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখবে।” আইএইএ ও FАО-এর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহাকাশ ও পারমাণবিক মিউটাজেনেসিসের মাধ্যমে ফসলের উন্নয়ন সময় অর্ধেক পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
মোটের উপর, মহাকাশে বীজ ও ফসল চাষ ও মিউটেশন গবেষণা শুধুমাত্র নভোচারীদের খাদ্য সরবরাহের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর কৃষি উৎপাদন, জলবায়ু অভিযোজন এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।