জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত ‘জুলাই সনদ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সর্বশেষ বৈঠকে কমিশন জানায়, সনদের অঙ্গীকারনামা অংশ থেকে কয়েকটি বিতর্কিত প্রস্তাব বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি সরাসরি সনদের অন্তর্ভুক্ত থাকছে না।
প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছিল, সংবিধান বা আইনে যা-ই থাকুক, জুলাই সনদই প্রাধান্য পাবে। তবে বিএনপির তীব্র আপত্তির মুখে কমিশন এখন বলছে, সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হলে সনদের সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, কিন্তু তা কার্যকর হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
খসড়ায় আরও প্রস্তাব ছিল যে, সনদের ব্যাখ্যার একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে। বিএনপিসহ আটটি দল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আদালতের এখতিয়ারের বিষয়গুলো নিয়ে সনদে আলাদা করে কিছু বলা হবে না। একইভাবে, সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না রাখার প্রস্তাবও প্রত্যাহার হচ্ছে। পরিবর্তিত খসড়ায় বলা হতে পারে, সনদে স্বাক্ষর করা কোনো দল আদালতে যাবে না, তবে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করা হবে না।
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও মতপার্থক্য থাকায় খসড়ায় এ অংশটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। গণভোট, সংসদ বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশসহ বিভিন্ন বিকল্প প্রক্রিয়া সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকারই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রক্রিয়ায় সনদ বাস্তবায়ন হবে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ৭৩টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। বাকি ১১টি প্রস্তাবে মতপার্থক্য রয়েছে, যার মধ্যে ৯টিতে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি।
চূড়ান্ত সনদ দুই খণ্ডে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে—প্রথম খণ্ডে থাকবে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার, আর দ্বিতীয় খণ্ডে সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন এমন প্রস্তাব ও মতবিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো।
কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, প্রতিটি দলের মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে, সনদ ও তার সুপারিশ যেন আইনি, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সংশোধিত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে।