প্রতিদিন আমরা খাবার খেয়ে থাকি।কখনো কি ভেবে দেখেছি , খাবার খাওয়া শুধু দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজ নয়, বরং ইবাদতের অংশ? রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবার খাওয়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট আদব বা সুন্নাহ মেনে চলতে বলেছেন। এগুলো মেনে চললে খাবার হবে কল্যাণের মাধ্যম এবং বরকতের কারণ। নিচে সুন্দরভাবে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো:
খাবার শুরুর আগে-
১) হাত ধোয়া-
খাবারের আগে পরিষ্কারভাবে হাত ধোয়া সুন্নাহ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“খাবারের আগে ও পরে হাত ধোও, এতে খাবার বরকতময় হবে।” (ইবন মাজাহ, হাদিস ১৮৪৬)
২) বিসমিল্লাহ বলা-
খাবার শুরু করার সময় بِسْمِ اللهِ বলা সুন্নাহ।
হাদিসে এসেছে:
“তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে বসে, সে যেন আল্লাহর নাম উল্লেখ করে। আর যদি শুরুতে আল্লাহর নাম ভুলে যায়, তবে বলবে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়াখিরাহু’। ” (আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৭)
খাবার খাওয়ার সময়-
১) ডান হাতে খাওয়া-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমরা ডান হাতে খাও এবং ডান হাতে পান কর।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস ২০২০)
২) সামনের দিক থেকে খাওয়া-
খাবার নিজের সামনে থেকে খাওয়া সুন্নাহ।
হাদিসে আছে:
“হে বালক! আল্লাহর নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।” (সহীহ বুখারি, হাদিস ৫৩৭৬)
৩) মাঝামাঝি থেকে না খাওয়া-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যখন তোমরা খাবে, খাবারের মাঝখান থেকে খেও না; বরং চারপাশ থেকে খাও। কারণ বরকত নেমে আসে মাঝখানে।” (আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৭২)
৪) মিতাহার করা (অতিরিক্ত না খাওয়া)-
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।” (সুরা আ’রাফ, ৭:৩১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“মানুষের পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র নেই। কয়েক লোকমা তার জন্য যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখবে। যদি অবশ্যই খেতে হয়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাসের জন্য।” (তিরমিজি, হাদিস ২৩৮০)
৫) একসাথে বসে খাওয়া-
হাদিসে এসেছে:
“তোমরা একসাথে খাও, আলাদা আলাদা খেও না। এতে তোমাদের খাবারে বরকত দেওয়া হবে।” (ইবন মাজাহ, হাদিস ৩২৮৭)
খাবার শেষে-
১) হাত চাটা ও চেটে খাওয়া-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যেন তার আঙ্গুল চেটে না খেয়ে হাত ধুয়ে না ফেলে, কারণ সে জানে না কোন অংশে বরকত রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস ২০৩১)
২) হাত-মুখ ধোয়া-
খাবার শেষে হাত-মুখ ধোয়া সুন্নাহ।
৩) হামদ বা দোয়া পড়া-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি খাওয়ার পর বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানি হাযা ওয়া রাযাকানিহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নি ওয়া লা কুওয়াহ্’ — তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (তিরমিজি, হাদিস ৩৪৫৮)
খাবার খাওয়ার সুন্নাহ মেনে চলার ফজিলত-
১)খাবার হবে বরকতময়।
২) অপচয় ও অস্বাস্থ্যকর জীবন থেকে বাঁচা যায়।
৩) কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
৪) দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কার লাভের আশ্বাস রয়েছে।
খাবার খাওয়া শুধু শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম নয়; বরং এটি ইসলামে ইবাদতের একটি অংশ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে খাবার শুরু করতে হবে, কীভাবে খেতে হবে এবং শেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি সুন্নাহ মানার ভেতরে রয়েছে স্বাস্থ্যের উপকারিতা, শৃঙ্খলা, অপচয় থেকে বাঁচা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ। তাই দৈনন্দিন জীবনে খাবারের সুন্নাহগুলো অনুশীলন করলে শুধু দুনিয়ার কল্যাণই নয়, আখিরাতেও এর উত্তম প্রতিদান লাভ করা সম্ভব।