অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবারও নিশ্চিত করেছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, সেখানে তিনি নির্বাচিত বা নিযুক্ত কোনো ভূমিকায় থাকবেন না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারেট নিউজ-এ প্রকাশিত তাঁর লেখা একটি নিবন্ধে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান এবং বিভিন্ন সংস্কার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সেখানে তিনি লেখেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন। এর মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে ভোটারদের সামনে তাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রবাসী নাগরিকসহ সব যোগ্য ভোটারকে ভোটদানের আওতায় আনাই সরকারের প্রতিশ্রুতি।
নিজ দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে ড. ইউনূস জানান, তিনি যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন রাষ্ট্রযন্ত্র চরম অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত ছিল। পুলিশ কার্যত দায়িত্ব পালন করছিল না, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যের দিকে যাচ্ছিল, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, আর গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রায় অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়া ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নতুন দলও উদীয়মান ভাবনা নিয়ে সামনে এসেছে। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে—৫ আগস্টের গণবিক্ষোভে দমন-পীড়নের পথ না বেছে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।
জেনারেশন ‘জেড’-এর ভূমিকায় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবিকে কেন্দ্র করেই এই আন্দোলন বিশ্বের প্রথম "জেন জেড বিপ্লব" হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তরুণদের এই আগ্রহ ভবিষ্যতে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন অনুপ্রেরণা হতে পারে।
বিদেশনীতি নিয়েও পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যেই কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় সাংবিধানিক সংশোধনী প্রস্তাবনার কথাও সামনে আনেন ড. ইউনূস। তাঁর মতে, এটি এমন একটি ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের চক্রে ফিরে না যায়। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি মানুষের দৃঢ়তা, কল্পনা ও সাহসের ফল হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ড. ইউনূস নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জুলাই পরবর্তী পরিবর্তনে দেশ অগ্রগতির পথে হাঁটছে। বিশ্ব গণমাধ্যমেও সেটির প্রতিফলন ঘটেছে। দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের "সেরা দেশ" হিসেবে অভিহিত করে—যেটি গণতন্ত্রের পুনরুত্থান ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রতি বৈশ্বিক স্বীকৃতিরই প্রমাণ। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে চলমান প্রচেষ্টা সেদিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নিবন্ধের শেষভাগে তিনি সহযোগীদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর মতে, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যারা দেশের পাশে আছেন, তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বড় আশা—সম্ভবত শেষ আশা।