বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা যেকোনো সময় সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়লে কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মানবিক সংকটের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতিও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে আরাকানের বুথিডং থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক সেলিম জানান, প্রাণে বাঁচলেও আরাকান আর্মির নির্যাতনে তার মা ও পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। ক্যাম্পের বিভিন্ন ঘরে গিয়ে দেখা যায়, এখনো অনেক রোহিঙ্গা আরাকান আর্মির সহিংসতার ক্ষত নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কারও হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে, আবার কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের ধারা অনুসরণ করেই আরাকান আর্মি তাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। নির্যাতনের পাশাপাশি নাগরিক সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাখাইনে একটি গণকবর আবিষ্কার হয়েছে, যেখানে শত শত রোহিঙ্গা হত্যার প্রমাণ মেলে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিগত ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব না মিটলে সংকট নিরসনের সম্ভাবনা নেই।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, “মিয়ানমারে সামরিক বা বেসামরিক যেই সরকারই থাকুক না কেন, তাদের অবস্থানের পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেনের মতো শরণার্থী সমস্যারও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান মিলেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত এক বছরে আরাকান আর্মির নির্যাতনে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তে অপেক্ষমাণ নতুন ঢল নামলে বাংলাদেশকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
আরআরআরসি কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের সীমান্তে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শুধু অনুপ্রবেশ নয়, প্রতিনিয়ত সীমান্ত দিয়ে মাদক ও অস্ত্র প্রবেশসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম ঘটছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।”
প্রসঙ্গত, নাফ নদীর ওপারে মংডু টাউনশিপ থেকে আট বছর আগে সামরিক জান্তা ও রাখাইনদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে, ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হলে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের ঝুঁকি বাড়ছে।
সীমান্তে এক লাখ রোহিঙ্গার অপেক্ষা, নতুন ঢল নিয়ে শঙ্কা বাংলাদেশে
- আপলোড সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ০৮:০৯:০০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ০৮:০৯:০০ অপরাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ