গত ৭ আগস্ট রাতে গাজীপুর চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেট এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক তুহিনকে। শুরুতে তার মৃত্যুর পেছনে চাঁদাবাজির রিপোর্ট বা ছিনতাইয়ের দৃশ্য দেখে ফেলাই কারণ হিসেবে প্রচারিত হলেও, পরে সময় সংবাদের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। জানা যায়, ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় শাপলা ম্যানশনের সামনে একটি ‘হানি ট্র্যাপ’ হামলার সময় তুহিনের ভিডিও ধারণকে কেন্দ্র করে।
সেই সন্ধ্যায় শাপলা ম্যানশনের সামনে এক নারী ও এক ব্যক্তির মধ্যে হাতাহাতির দৃশ্য ধরা পড়ে সিসিটিভিতে। কিছুক্ষণ পরই ৫-৬ জন অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তির ওপর হামলা চালায়। আহত ব্যক্তি বাদশা মিয়া জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়ার সময় এক নারী তাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন এবং পরে হামলার শিকার হন। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনাটিই ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
ঘটনার আধা কিলোমিটারের মধ্যে তুহিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—সেখানেও কি একই হামলাকারীরা জড়িত? পুলিশ বলছে, দুটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, শাপলা ম্যানশনের হামলাকারীরাই পরে মসজিদ মার্কেট এলাকায় তুহিনকে হত্যার পর পালিয়ে যায়।
এই পুরো ঘটনার নেপথ্যে যে হানি ট্র্যাপ চক্রটি সক্রিয়, তার নেতৃত্বে আছেন গোলাপী নামে এক নারী, যিনি পূর্বেও এমন ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে জানায় পুলিশ। তার সহযোগিতায় একাধিক পুরুষ সদস্য ভিকটিমকে ফাঁদে ফেলে, অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে এবং ধরা পড়ার ভয়ে ভিডিওকারীদের টার্গেট করে। পুলিশের ধারণা, ঠিক এমন একটি কারণেই প্রাণ হারিয়েছেন সাংবাদিক তুহিন।
এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করা হয়েছে, এবং আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, নিহত তুহিনের মোবাইল ফোন এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, ফলে তার ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতেই তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিক তুহিনের পরিবার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে গাজীপুরের সাংবাদিক মহল ও স্থানীয়রা প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হচ্ছে।
সূত্র: সময় সংবাদ
সূত্র: সময় সংবাদ