ওমানের রাজধানী মস্কটের এক নীরব আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে বাবুস সালাম মসজিদ—নামেই যেমন শান্তি, স্থাপত্যেও তেমনি প্রশান্ত সৌন্দর্যের প্রতিফলন। জ্যামিতিক নকশা, প্রাকৃতিক আলো ও নীরব পরিবেশের সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদে বিনয়, সরলতা এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য ভারসাম্য দেখা যায়।
আল-জিসর চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০২৩ সালের শুরুতে উদ্বোধিত মসজিদটি ওমানের ঐতিহ্য ও সমকালীন স্থাপত্যধারার সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় উপকরণ, বাতাসের প্রাকৃতিক প্রবাহ ও সূর্যালোকের ব্যবহার নিশ্চিত করে নকশাটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার ন্যূনতম হয়। পরিবেশবান্ধব এই চিন্তাভাবনার জন্যই ২০২৪ সালে বাবুস সালাম মসজিদ বিশ্বের সেরা উপাসনালয়ের তালিকায় স্থান পায়।
স্থপতিরা মসজিদটির স্থাপত্যে আলো ও নীরবতাকে প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ছাদ ও দেয়ালের সূক্ষ্ম ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ধীরে ধীরে নামাজকক্ষে প্রবেশ করে, যা নামাজের সময় এক আধ্যাত্মিক আলোকাবৃত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে, উপাসক যেন এক প্রশান্ত জ্যোতির সমুদ্রে নিমগ্ন হন।
মসজিদটি পাঁচটি জ্যামিতিক অংশে বিভক্ত, যার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে শঙ্কু আকৃতির একটি মিনার। ভবনের হালকা গোলাপি রঙ ওমানের পর্বতমালার প্রাকৃতিক পাথরের রঙ থেকে অনুপ্রাণিত। এতে একদিকে স্থানীয় ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে, অন্যদিকে আধুনিক স্থাপত্যের শিল্পরুচিও প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রবেশপথ থেকে মূল নামাজকক্ষে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো যাত্রা যেন এক ধীর, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা—বাগান, ফোয়ারা ও শান্তিপূর্ণ পথ ধরে নামাজের স্থানে পৌঁছানো মানুষকে ধীরে ধীরে শহরের কোলাহল থেকে সরিয়ে এক নিবিড় প্রশান্তিতে নিয়ে যায়।
স্থাপত্যগতভাবে মসজিদের প্রতিটি উপাদানের রয়েছে বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা। বৃত্তাকার নামাজকক্ষটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে ইমামের কণ্ঠ লাউডস্পিকার ছাড়াই পুরো প্রাঙ্গণে পৌঁছায়—এর ফলে শব্দ স্বাভাবিকভাবে প্রতিফলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।
আজকের স্থাপত্যে যেখানে জাঁকজমক প্রাধান্য পায়, সেখানে বাবুস সালাম মসজিদ তার সরল, আলোভরা নকশায় এক নতুন বার্তা দিয়েছে—
“সত্যিকারের সৌন্দর্য নিহিত বিনয়ে, আর স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠত্ব তার নীরবতায়।”
ডেস্ক রিপোর্ট