ঐতিহাসিক জুলাই সনদে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষর হয়েছে, কিন্তু এ আয়োজনের শোভা ম্লান করে দিয়েছে মাঠে ঘটে যাওয়া সহিংসতা। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশ ও জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যার এক মর্মান্তিক দৃশ্য এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—এক জুলাই যোদ্ধার কৃত্রিম হাত পড়ে থাকতে দেখা গেছে রাস্তায়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের লাঠিচার্জের সময় এক প্রতিবাদী যোদ্ধার শরীর থেকে তার কৃত্রিম হাত খুলে নিচে পড়ে যায়। আতঙ্কিত অবস্থায় তিনি হাতটি ফেলে স্থান ত্যাগ করেন। পরে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ওই যোদ্ধা আতিকুল ইসলাম (আতিকুল গাজী), যিনি গণমাধ্যমে কষ্টভরা কণ্ঠে বলেন, “আমার একটা হাত নেই, আর্টিফিশিয়াল হাত—সেটাও ভেঙে ফেলল ওরা। আমি কি এমন সচ্ছল যে, আরেকটি কিনব?” রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ফেসবুকে গণমাধ্যমকর্মী কেফায়েত শাকিল লিখেছেন, “এরপর দেশের জন্য হাত বাড়াতে তরুণেরা শতবার ভাববে।” একইভাবে সাংবাদিক আজহার লেমন মন্তব্য করেন, “জুলাই পড়ে রইল রাস্তায়, অথচ সনদ সাক্ষরের মহা আয়োজন!” অন্যদিকে লেখক এম মাহমুদ রিশাদ বলেন, “যাদের ত্যাগের ফলে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, আজ তারাই পুলিশের হাতে নির্যাতিত। যেন ১৯৭১-এর বঞ্চনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
সনদ স্বাক্ষরের আগে জুলাই যোদ্ধারা যে দাবিগুলো তুলে ধরেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল—জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া, “জুলাই আহত বীর” হিসেবে তাদের আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং এসব বিষয়কে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এ অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রের নেতৃত্বে উদযাপিত ঐতিহাসিক সনদ কি সত্যিই সেই মুক্তির প্রতীক হিসেবে জায়গা করে নিল—নাকি বাস্তবের আঘাতে তার মানবিক বার্তা হারিয়ে গেল রাস্তায় পড়ে থাকা একটি কৃত্রিম হাতের পাশে?