মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে হাক্কারপাড় ব্রিজ ও তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে এলাকাগুলোতে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির ঘাটতির সুযোগে স্থানীয়রা নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন। শুধু এক সপ্তাহেই গণপিটুনিতে তিনজন ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে এবং অন্তত তিনজন আহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতাই জনরোষের এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ।
গত ৩১ আগস্ট বিকেলে মোহাম্মদপুরের হাক্কারপাড় ব্রিজ এলাকায় দিনের বেলায় অটোরিকশার যাত্রীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুট করে পালায় দুই যুবক। স্থানীয়দের ভাষ্য, এ এলাকায় ছিনতাই এখন নিয়মিত ঘটনা। এমনকি নবীনগর হাউজিংয়ের সড়কেও একই চক্র সক্রিয়। ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে দুই ছিনতাইকারী গণপিটুনিতে মারা যায়। নিহতদের পরিবারের দাবি, তাদের বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যদিও তারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে স্বজনেরাই।
অন্যদিকে, তুরাগ নদীর ওয়াকওয়েতেও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ের সময় ধরা পড়া দুই জনকে গণপিটুনি দিলে একজন মারা যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওয়াকওয়ে পথটি দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন শুধু সাধারণ পথচারী নয়, নগদ অর্থ বহনকারী লোকজনও। বসিলা এলাকায় এক কুরিয়ার কর্মী ও তুরাগ হাউজিংয়ে ময়লার টাকা সংগ্রহকারী ম্যানেজার অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন সম্প্রতি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধীরা আবার সক্রিয় হয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নাগরিকরা। অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, “মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, অথচ যাদের দায়িত্ব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা, তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে আত্মরক্ষায় সাধারণ মানুষ আইন হাতে নিচ্ছেন।”
র্যাব-২ জানায়, গত কয়েক মাসে ৭০০ জনের বেশি ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে মামলা হয়েছে। তারা দাবি করছে, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, আদাবরসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ছিনতাইকারীরা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সরে গিয়ে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান জানিয়েছেন, নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে এবং অপরাধ প্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত টহল দেওয়া হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত টহল, শক্ত নজরদারি ও অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসতে পারে।
মোহাম্মদপুরে ছিনতাই ও গণপিটুনি বেড়েই চলেছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ
- আপলোড সময় : ১৭-০৯-২০২৫ ০৯:৪৬:১৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-০৯-২০২৫ ০৯:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ