রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে চালু হওয়া নগর পরিবহন সেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাস রুট রেশনালাইজেশন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চালু হওয়া বিশেষায়িত গোলাপি বাস সেবাও যাত্রীদের আশার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আগের মতোই বিশৃঙ্খলভাবে চলছে গণপরিবহন খাত।
তথ্য অনুযায়ী, তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মোহাম্মদপুর থেকে ঘাটারচর রুটে এই সেবা চালু হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাউন্টারভিত্তিক নির্দিষ্ট রঙের বাস ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়ে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম ধাপে রাজধানীতে প্রবেশ করা আবদুল্লাপুর রুটের বাসগুলোর রং নির্ধারণ করা হয় গোলাপি। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই সেই উদ্যোগও থমকে দাঁড়ায়।
প্রত্যাশিত ই-টিকিটিং সেবাও কার্যকর হয়নি। নির্দিষ্ট কাউন্টার না থাকায় অনেক জায়গায় যাত্রীদের টিকিট পদ্ধতি ভেস্তে গেছে। এখনও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বাড়তি ভাড়া আদায় ও পরিবহন শ্রমিকদের অনিয়ম চলছেই। ফলে যাত্রীরা পরিবহন সেবায় হতাশা প্রকাশ করছেন।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) জানিয়েছে, বাস রুট রেশনালাইজেশন অনুযায়ী ৯৫টি রুট সক্রিয় ধরা হলেও বিআরটিএর হিসেবে সংখ্যা ১১০ এবং ডিএমপির হিসাবে ৬০। তিন পক্ষের পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪২টি রুট নির্ধারণ করেছে ডিটিসিএ। তবে মালিকপক্ষ নতুন বাস কিনতে সরকারি সহায়তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় অনীহা দেখাচ্ছে।
বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে বাসগুলোর একটি মান বজায় রাখতে চাই। তবে শর্ত কঠিন হওয়ায় নতুন বাস যুক্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে।” অন্যদিকে ডিটিসিএর প্রকল্প পরিচালক নীলিমা আখতার জানান, “একটি রুটে একটি কোম্পানির বাস চালানো হলে সবচেয়ে ভালো ফল আসবে। আমরা সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছি।”
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নগর পরিবহন খাত শৃঙ্খলায় ফিরছে না মূলত সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও মালিকদের অনীহার কারণে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “বাস রুট রেশনালাইজেশনে মালিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আলাদা রাস্তায় বাস চালানোর সুযোগ, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীসুবিধা উন্নয়ন ছাড়া এই প্রকল্প সফল হবে না।”