প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এমবিএস ধীরে ধীরে নিজেকে বাদশাহর "গেটকিপার" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি বাদশাহকে পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলেন। এমনকি তার মা ও দুই বোনকেও সীমিত করে রাখা হয়, আর বাদশাহকে বলা হতো তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। এইভাবে বাবার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি সৌদি রাজনীতিতে নিজের আধিপত্য জোরদার করেন।
২০১৫ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এমবিএস ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালান। প্রাথমিকভাবে দেশবাসী এটিকে সাহসী পদক্ষেপ মনে করলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি সৌদি আরবের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক মহল এটিকে এমবিএসের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে সমালোচনা করেছে।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স থেকে সরিয়ে এমবিএসকে নিয়োগ করা হয়। খবর অনুযায়ী, নায়েফকে রাতের অন্ধকারে প্রাসাদে ডেকে এনে তার রক্ষীদের নিরস্ত্র করা হয় এবং জোর করে পদত্যাগ করানো হয়। এরপর তিনি গৃহবন্দি হন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ক্ষমতা নিজের হাতে নেওয়ার পর এমবিএস একাধিক সামাজিক সংস্কার চালু করেন। ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার এবং পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। তবে সমালোচকদের মতে, এগুলো মূলত অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ। একই সঙ্গে তিনি শুরা পরিষদের প্রথা ভেঙে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সৌদি রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিলাসিতার জন্যও খ্যাত এমবিএস ৫০ কোটি ডলার খরচ করে একটি ইয়ট এবং ৪৫ কোটি ডলারের একটি চিত্রকর্ম ক্রয় করেন। ২০১৭ সালে শতাধিক প্রিন্স ও ব্যবসায়ীকে রিৎজ-কার্লটন হোটেলে আটক করে তাদের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার জরিমানা আদায় করেন। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে সৌদি সফরে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে ওঠে।
মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, এমবিএসের শাসনকালে হাজারো মানুষ বিচার ছাড়া আটক হন, সাংবাদিকরা বন্দি হন এবং সমালোচনার ওপর কঠোর দমন চালানো হয়। সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংকট ছিল সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ড, যার নির্দেশে তার সম্পর্ক ছিল এমবিএসের সঙ্গে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এই বিষয়টি সমর্থিত হলেও, তিনি সরাসরি দায় অস্বীকার করেন।
আজ সৌদি আরবজুড়ে মোহাম্মদ বিন সালমানের পোস্টার দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি দেশটির রাজনীতির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সমালোচকরা তাকে কঠোর শাসক ও ক্ষমতালোভী মনে করলেও, সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, তিনি সৌদি আরবকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র: বিবিসি