জাতিসংঘের বৈশ্বিক ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা আইপিসি (Integrated Food Security Phase Classification) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। এটাই প্রথমবারের মতো কোনো জাতিসংঘ সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করল।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইপিসি গাজা সিটি ও আশপাশের অঞ্চলকে খাদ্য নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ধাপ ‘পঞ্চম ধাপে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর অর্থ হলো, ওই অঞ্চলের মানুষ এখন চরম অনাহারের মধ্যে রয়েছেন এবং ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনুসেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আইপিসির তথ্য অনুযায়ী, গাজায় বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে মারাত্মক ধাপে আছেন। মোট জনসংখ্যার আরও ৫৪ শতাংশ—প্রায় ১০ লাখ মানুষ—ধাপ-৪ অর্থাৎ খাদ্য জরুরি অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রায় ৪ লাখ মানুষ ধাপ-৩ এ রয়েছেন, যারা খাদ্য সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে।
গত জুন থেকে গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ৪১ হাজারের বেশি শিশু মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৫৫ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী জরুরি পুষ্টি সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় আছেন। যদিও আইপিসির প্রতিবেদনকে অস্বীকার করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, “গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই” এবং প্রতিবেদটি “হামাসের মিথ্যা প্রচারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।”
এর আগে ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছিল, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকাজুড়ে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুর্ভিক্ষ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, গাজা বর্তমানে তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও মানবিক সাহায্য ঢুকতে পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে অন্তত ২৭১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু।