রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে আজ (শনিবার) বিকেলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। জামায়াত আমির বলেছেন, চাঁদা আমরা নেব না, নিতেও দেব না। দুর্নীতি আমরা করব না, করতেও দেব না।
এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে মঞ্চে ঢলে পড়েন। তার কিছুক্ষণ পরই আবার উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এরপর আশপাশে থাকা নেতাকর্মীরা দ্রুত এসে তাকে উঠিয়ে দিলে তিনি ফের বক্তব্য শুরু করেন।
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি কথা বলতে শুরু করে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে জামায়াতের চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। তৎপর হয়ে উঠেন স্বেচ্ছাসেবকরা। জামায়াতের স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন।
অসুস্থ অবস্থায় মঞ্চে বসেই মাইক হাতে নিজের সমাপনী বক্তব্য দেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আবু সাঈদরা যদি না দাঁড়াত, তাহলে ২৪ জীবনবাজি রাখা যুদ্ধটা না হলে, আজকে যারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করছেন, তাদের দাবিগুলো কোথায় থাকত। সুতরাং আমাদের প্রিয় শহিদদের হেয় করা যাবে না। অহংকার করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলকে অপমান করা যাবে না। যদিও কেউ এগুলো করে, তাহলে তাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের রোগ বীজ বুনেছে।
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবে, তার প্রমাণ কী? সবাইকে নিয়েই তা গড়ে তুলব। আমরা কথা দিচ্ছি, মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে।
জামায়াত আমির বলেন, আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, লাখো জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে যারা আগামীতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবেন, কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী সরকার থেকে কোনো প্লট গ্রহণ করবে না, ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বে না, নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবে না, নিজেদের নির্দিষ্ট কাজের জন্য যে বরাদ্দ পাবেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের কাছে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন ততসময় লড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ। মুক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে। যদি মানুষের সেবা করার সুযোগ পাই তাহলে মালিক হব না, সেবক হবো।
জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলাম সরকার গঠন করলে কোনো দুর্নীতি করবে না, শুল্ক দিয়েই গাড়িতে চড়বে।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমার দুর্ভাগ্য আমি আন্দোলনে শহীদ হতে পারি নাই। আগামীতে যে আন্দোলন হবে আল্লাহ যেন সেখানে আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশে পুরোনো কোন কিছুই থাকবে না। পুরোনো এই বস্তা পচা জিনিস যদি এই দেশে থাকে, তাহলে কেন এত লোক জীবন দিল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতের আজকের প্রোগ্রামে তিন জন মারা গেছেন। এদের একজন সমাবেশস্থলে মারা যান। আল্লাহ্ তাদের জান্নাত দান করুন। তাদের পরিবারকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন।
এর আগে, ৭ দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর ২টায় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে সমাবেশের কার্যক্রম সকাল থেকেই চলে। সারাদেশে থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী এই সমাবেশে যোগ দেন। জামায়াত নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। জামায়াত আমিরের বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয় জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ।