মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী জানিয়েছেন, দিল্লি থেকে আটক করে তাদের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়। শরণার্থীদের দাবি, লাইফজ্যাকেট পরিয়ে ছোট রাবারের নৌকায় তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয় তারা ইন্দোনেশিয়ার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মিয়ানমারে গিয়ে পৌঁছান, যেখানে স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার করে এবং বাহটু আর্মি নামের এক প্রতিরোধ গোষ্ঠী আশ্রয় দেয়।
রোহিঙ্গারা জানান, নৌবাহিনীর জাহাজে প্রায় ১৪ ঘণ্টা তাদের আটক রাখা হয় এবং এ সময়ে মারধর, অপমান ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। তাদের হাত বেঁধে, মুখ ঢাকা অবস্থায় রাখা হয়। কয়েকজনকে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয় এবং খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগও রয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টমাস অ্যান্ড্রুজ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ রোহিঙ্গাদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এ বিষয়ে ভারতের মিশনের কাছে প্রমাণ জমা দেওয়া হলেও এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তারা ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে গণ্য হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে আনুমানিক ২৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত, যদিও প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। অপরদিকে বাংলাদেশে ২০১৭ সালের পর থেকে লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে বর্তমানে সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।
শরণার্থীদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দিল্লির এক রোহিঙ্গা তরুণ নুরুল আমিন জানান, তার ভাইসহ কয়েকজনকে ২০২৩ সালে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাদের জীবন এখন অনিশ্চিত।
এ ঘটনায় রোহিঙ্গারা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে যাতে নির্বাসন বন্ধ করা হয়। তবে আদালতের এক বিচারপতি অভিযোগগুলোকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। মামলার শুনানি আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।