জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দফতরে প্লাস্টিক দূষণ রোধে বাধ্যতামূলক একটি বৈশ্বিক চুক্তির লক্ষ্যে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী আলোচনা সমাপ্ত হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। শুক্রবার আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়, তবে দেশগুলো প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করা নাকি শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে চুক্তিকে সীমাবদ্ধ রাখা হবে—সে বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
আলোচনায় অংশ নেয় ১৮৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করার পরও সমঝোতা সম্ভব হয়নি। আলোচনার শেষ রাতে প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের ‘পালেই দে ন্যাশন’ ভবনে একত্রিত হয়ে অচলাবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। নরওয়ের প্রতিনিধি স্বীকার করেন, তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। কিউবা হতাশা প্রকাশ করে জানায়, এই প্রক্রিয়ায় একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া হলো, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এখনো জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
৩৯টি ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের পক্ষে পালাউও আলোচনার অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। দেশটির প্রতিনিধিরা জানান, তারা বারবার সম্পদ ও জনশক্তি বিনিয়োগ করলেও জনগণ প্রত্যাশিত ফলাফল দেখছে না। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘হাই অ্যাম্বিশন কোয়ালিশন’ প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাস এবং বিষাক্ত রাসায়নিক নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখে। কিন্তু সৌদি আরব, কুয়েত, রাশিয়া, ইরান ও মালয়েশিয়া সমন্বিত ‘লাইক-মাইন্ডেড গ্রুপ’ চুক্তির পরিধি সীমিত রাখার দাবি জানায়। কুয়েত অভিযোগ করে, তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি এবং স্পষ্ট পরিধি ছাড়া এই প্রক্রিয়া টেকসই হতে পারে না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার অর্ধেকই একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। এ বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের মাত্র ১৫ শতাংশ পুনঃব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হয় এবং মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইকেল হয়। প্রায় ৪৬ শতাংশ ফেলা হয় ভাগাড়ে, ১৭ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং ২২ শতাংশ ভুল ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ বাস্তবতাই বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি কার্যকর চুক্তির জরুরি প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে।