বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) বিভাগ থেকে দেশের উত্তরণের সময়সীমা তিন থেকে ছয় বছর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, ফলে অতিরিক্ত সময় পাওয়া গেলে রপ্তানি খাত ও অর্থনীতি ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারবে।
শনিবার রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘এলডিসি গ্রাজুয়েশন: সাম অপশনস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই আহ্বান জানান বক্তারা। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) সেমিনারে সহযোগিতা করে।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, জাতিসংঘের তিনটি মানদণ্ড—মোট জাতীয় আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক—দুই দফা পর্যালোচনায় পূরণ করায় ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এটি অর্থনৈতিক অগ্রগতির বড় সাফল্য হলেও সামনে জটিল চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। বাজারে প্রবেশাধিকার রক্ষা ও শুল্কজনিত ক্ষতি এড়াতে ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং বড় এশীয় অর্থনীতির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে ওষুধ, আইটি সেবা, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে দ্য থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার সানিয়া রেইড স্মিথ বলেন, এলডিসি মর্যাদা হারালে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে, ফলে শুল্ক সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জিএসপি+ বা সমমানের সুবিধা না পেলে রপ্তানি ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমার ঝুঁকি রয়েছে। এতে ফার্মাসিউটিক্যালসসহ সব খাত প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যান্য আলোচকরা এলডিসি উত্তরণের আগে মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। এ. কে. আজাদ ও নাসিম মঞ্জুরসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা সরকারের প্রতি উত্তরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে রপ্তানি ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো যায়।
ডেস্ক রিপোর্ট