ঢাকা , সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫ , ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গাজার শিফা হাসপাতালে নিহত আল-জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের ৬ এপ্রিলে দেয়া শেষ সংবেদনশীল বার্তা গাজায় সদ্য শাহাদাত বরণ করা আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের সর্বশেষ পোস্ট আনাস আল-শরিফসহ আল জাজিরার পুরো সাংবাদিক টিমকে হত্যা করেছে ইসরায়েল! শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী স্বাগত ও বিদায়ে নতুন নির্দেশনা শিক্ষক বদলি নীতিমালা বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি পলাতক ৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক বাতিল, আর্থিক সুবিধা বন্ধের নির্দেশ গরিবের গভর্নরও পালিয়ে গেছেন: উপদেষ্টা সাখাওয়াত খুলনায় সুপার জুট মিলে অগ্নিকাণ্ড, দ্রুত নিয়ন্ত্রণে বড় ক্ষতি এড়ানো গেল নিয়মিত শিক্ষাপর্ব সমাপ্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে, বাংলাদেশের অখণ্ডতায় নতুন হুমকি তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে ৬.১ মৃদু ভূমিকম্প: নিহতের খবর অনিশ্চিত, জরুরি তৎপরতা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে ভারতের তীব্র অবস্থান, রাজনাথ সিংয়ের কড়া বার্তা দামেস্কে উমাইয়া জামে মসজিদে শুরু হলো "মুওয়াত্তা মালেক" থেকে হাদিসের দরস পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ভারতকে হুঁশিয়ারি: সিন্ধু নদীর বাঁধ তৈরি হলে,ধ্বংসে মিসাইলও প্রস্তুত রাঙ্গামাটিতে আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির আড়ালে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সুদানের দারফুরে চলমান সংঘাতে অপুষ্টিতে ৬৩ জনের মৃত্যু, মানবিক সংকট তীব্রতর জাবিতে ১৭ হলের কমিটি ঘোষণা: রোকেয়া হলের সভাপতি হলেন ছাত্রলীগ নেত্রী কাজী মৌসুমী আফরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টায় জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস বাতিলের আল্টিমেটাম দশ দিন ধরে কাশ্মীরের কুলগামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সশস্ত্র গেরিলাদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান আর্মির জোরালো লড়াই মিথ্যা অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবির জামিন সুপ্রিম কোর্টে বহাল

গাজার শিফা হাসপাতালে নিহত আল-জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের ৬ এপ্রিলে দেয়া শেষ সংবেদনশীল বার্তা

  • আপলোড সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৭:১৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০৮-২০২৫ ০৭:১৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
গাজার শিফা হাসপাতালে নিহত আল-জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের ৬ এপ্রিলে দেয়া শেষ সংবেদনশীল বার্তা ছবি: সংগৃহীত
গাজার আল-জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের শেষ বার্তায় তার জীবনের সংগ্রাম ও মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি মৃত্যুর আগে স্পষ্ট ঘোষণা করেন যে, ইসরায়েল তাকে হত্যা করে তার কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পারলেও, তিনি সর্বদা তার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের সত্য কথা প্রকাশের দায়িত্ব পালনে কোনওদিন পশ্চাৎপদ হননি। তাঁর শেষ ইচ্ছা ও বার্তা হলো ফিলিস্তিনের জনগণকে উৎসর্গ করা, বিশেষ করে নির্যাতিত শিশুদের, যারা দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর গণহত্যার সম্মুখীন হয়েছে।
 
আনাস আল-শরীফ গভীর আবেগ ও সংকল্পের সঙ্গে তার পরিবারের প্রতিও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন। প্রিয় কন্যা, ছেলে, মা এবং স্ত্রীকে বিশেষ স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতির অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে মৃত্যুকে গ্রহণ করেছেন এবং শহীদ হিসেবে গণ্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, তিনি বিশ্ববাসীকে বলছেন, ফিলিস্তিনকে ভুলে যাওয়া যাবে না এবং যারা তাঁর স্বরকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে, তাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে নীরবতা অন্যায়ের সহযোগিতা।
 
এই বার্তাটি গাজার সঙ্কটের প্রেক্ষিতে একটি মানবিক ও রাজনৈতিক আহ্বান হিসেবেও বিবেচিত হয়, যেখানে সাংবাদিকের ভূমিকা শুধুমাত্র সংবাদ পরিবেশন নয়, মানবিক নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে স্বর তুলে ধরা। আনাস আল-শরীফের এই বাণী বিশ্বজুড়ে সংবেদনশীলদের কাছে গাজার বাস্তবতার মূল্যায়ন ও সহানুভূতির চেতনা জাগ্রত করে।

এপ্রিলের ৬ তারিখে আনাস আল শরীফ শেষ বার্তায় যা বলেছিলেন তা হুবুহু তুলে ধরা হলো: 

"এটাই আমার উইল এবং শেষ বার্তা। যদি আমার এই কথাগুলো তোমাদের কাছে পৌঁছে, তবে জেনে রেখো—ইসরায়েল আমাকে হত্যা করে আমার কণ্ঠ স্তব্ধ করতে সফল হয়েছে। আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক।
আল্লাহ জানেন, আমি আমার সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আমার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং তাদের কণ্ঠ হয়েছি—যেদিন আমি চোখ খুলেছি গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের গলিপথে, সেদিন থেকে শুরু করে। 
 
আমার আশা ছিল আল্লাহ আমার জীবন দীর্ঘ করবেন, যাতে আমি আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের মূল শহর, দখলকৃত আসকালন “মাজদাল”-এ ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর হয়েছে, তাঁর ফয়সালা পূর্ণ হয়েছে।
 
আমি জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে কষ্ট ভোগ করেছি, বারবার হারানো ও শোকের স্বাদ পেয়েছি। তবুও আমি একদিনের জন্যও সত্যকে বিকৃত না করে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব থেকে পিছু হটিনি — আশা করেছি আল্লাহ সাক্ষী হবেন তাদের বিরুদ্ধে যারা নীরব থেকেছে, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছে, যারা আমাদের নিশ্বাসকে অবরুদ্ধ করেছে, শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে নীরব থেকেছে, এবং যারা আমাদের জনগণের ওপর দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যা থামায়নি।
 
আমি তোমাদের হাতে অর্পণ করছি ফিলিস্তিনকে—যা মুসলিম উম্মাহর মুকুটের হীরা, বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। 
 
আমি তোমাদের হাতে অর্পণ করছি এর জনগণকে, সেই নির্যাতিত শিশুদের যাদের স্বপ্ন দেখার বা নিরাপদে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হয়নি, যাদের নিষ্পাপ দেহ হাজার হাজার টন ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে, ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে।
 
আমি তোমাদের অনুরোধ করছি—শৃঙ্খল যেন তোমাদের নীরব না করে, সীমান্ত যেন তোমাদের আটকাতে না পারে। ভূমি ও জনগণের মুক্তির সেতু হয়ে দাঁড়াও—যতক্ষণ না মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আমাদের লুণ্ঠিত মাতৃভূমির আকাশে উদিত হয়।
 
আমি আমার পরিবারকে তোমাদের হাতে সঁপে দিচ্ছি—
আমার প্রাণের টুকরা, প্রিয় কন্যা শাম, যাকে আমি স্বপ্নের মতো বড় হতে দেখতে পারিনি।
 
আমার প্রিয় ছেলে সালাহ, যাকে আমি শক্তিশালী হওয়া পর্যন্ত পাশে থেকে সমর্থন দিতে চেয়েছিলাম, যাতে সে আমার দায়িত্ব বহন করে মিশন চালিয়ে যেতে পারে।
 
আমার প্রিয় মা—যার দোয়া আমাকে এই অবস্থায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। তাঁর দোয়া ছিল আমার দুর্গ, তাঁর আলো ছিল আমার পথপ্রদর্শক। আমি প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন তাঁর হৃদয়কে ধৈর্য দেন এবং তাঁকে উত্তম প্রতিদান দেন।
 
আমার আজীবনের সঙ্গিনী, প্রিয় স্ত্রী উম্মে সালাহ বায়ান—যাকে যুদ্ধ দীর্ঘদিন ও মাসের পর মাস আমার থেকে আলাদা করেছে, তবুও তিনি ছিলেন অবিচল জলপাই গাছের কাণ্ডের মতো দৃঢ়, ধৈর্যশীলা, আল্লাহর ওপর ভরসাকারী, আমার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন পূর্ণ শক্তি ও ঈমানের সাথে। আমি তোমাদের অনুরোধ করছি—তোমরা তাঁদের পাশে থেকো, আল্লাহর পরে তাঁদের সহায় হও।
 
যদি আমি মারা যাই, আমি আমার নীতিতে অটল থেকেই মরব—আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দেব যে আমি তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রস্তুত এবং নিশ্চিত যে আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও চিরস্থায়ী।
 
হে আল্লাহ, আমাকে শহীদদের অন্তর্ভুক্ত করো, আমার অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ মাফ করো, আমার রক্তকে আমার জনগণ ও পরিবারের জন্য স্বাধীনতার পথে আলো বানাও। যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার জন্য রহমতের দোয়া করো—কারণ আমি আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করেছি, বদলাইনি, নড়বড়ে হইনি।
গাজাকে ভুলে যেও না…
আমাকে ভুলে যেও না—তোমাদের ক্ষমা ও কবুলের দোয়ার মধ্যে।
 
আনাস জামাল আল-শরীফ
০৬.০৪.২০২৫

নিউজটি আপডেট করেছেন : স্টাফ রিপোর্টার, ডেস্ক-০২

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
মালয়েশিয়া সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, পাঁচ চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা

মালয়েশিয়া সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, পাঁচ চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা