ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫ , ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
AI অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি ও তথ্য পাচার ? গোপনীয়তা হুমকির মুখে ! সীমান্তে নৃশংসতা: বাংলাদেশিদের গুলি নয়, এবার অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যা করছে বিএসএফ চট্টগ্রাম ক্লাবে সাবেক সেনাপ্রধানের রহস্যজনক মৃত্যু! , ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত স্মৃতির পাতায় জুলাই আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ জাতীয় সংসদে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ মঙ্গলবার ২০৫০ সালের জনসংখ্যা বিপর্যয়: চীন-জাপান-ইউরোপে অর্ধেক মানুষ কমবে?! গুমের আরেক শিকার: র‍্যাবের হেফাজতে সজীব, আইন কী বলছে? শ্রমিক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে: এম সাখাওয়াত হোসেন ফ্লাইট এক্সপার্ট কেলেঙ্কারি: ৩.৭৯ কোটি টাকা আত্মসাতে তিন কর্মকর্তা কারাগারে ভোলার নদীতে ইলিশের চরম সংকট, জেলেদের দোয়া-মোনাজাত তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ প্রচারে হস্তক্ষেপ করে না: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত মাদারীপুর শিবচরে পদ্মা সেতুর কাছে বাস চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির ধস : ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ, মালিক বিদেশে ফাঁসির মামলা এড়ালেন? ভুয়া জুলাই সনদ ডকুমেন্ট ভাইরাল, পিআর-এর জরুরি সতর্কতা! ফ্যাসিবাদমুক্ত হলো জনকণ্ঠ; নতুন সম্পাদকীয় বোর্ডের হাতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব "মামলা উঠিয়ে নাও, নয়তো ধ্বংস হও" — আইসিসি প্রসিকিউটরকে মোসাদের হুমকি! সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষায় বৈষম্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন: প্রাথমিক মন্ত্রণালয় কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস পর শুরু হচ্ছে মাছ ধরা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি পোশাক শিল্পের জন্য ইতিবাচক: ফজলে শামীম এহসান
ফীচার

স্মৃতির পাতায় জুলাই আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ২০২৪

  • আপলোড সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০২:১১:২৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০২:১১:২৭ পূর্বাহ্ন
স্মৃতির পাতায় জুলাই আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই মাস এক গভীর দাগ রেখে গেছে। এই মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুধু সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক চেতনার ধারাবাহিকতায়ও এক অনন্য মাইলফলক। 
 
বছরের মাঝামাঝি সময়ে যখন রাজনৈতিক নিপীড়ন, বাকস্বাধীনতার সংকোচন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র অসন্তোষ জেঁকে বসেছিল, তখনই উদ্ভূত হয় এই গণআন্দোলনের উত্তাল জোয়ার। 
 
২০২৪ সালের আন্দোলন কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বরং তা ছিল দীর্ঘদিন ধরে জমে ওঠা ক্ষোভ, বঞ্চনা এবং প্রতিবাদের একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ। বিরোধী দলসমূহ, বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলো, বহুদিন ধরেই নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। 
 
কিন্তু সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব, সাংবিধানিক কাঠামোর দোহাই দিয়ে এই দাবি প্রত্যাখ্যান এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার জনমনে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চার করে। এর পটভূমিতে, যখন তরুণ প্রজন্ম উপলব্ধি করে যে দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে, তখন তারা রাজপথে নামতে দ্বিধা করে না। 
 
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য প্রধান শহরে ছাত্র-জনতার জোরালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী, মধ্যবিত্ত শ্রেণির তরুণ সমাজ এবং পেশাজীবীদের বড় অংশ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে যোগ দেয়। 
 
তারা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায্য নির্বাচনী পরিবেশের দাবি জানিয়ে রাজপথে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাত্রসমাজের গণআন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। 
 
এই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর নেতৃত্ব কাঠামো। কোনো একক রাজনৈতিক দলের অধীন না থেকে এটি ছিল এক অভিন্ন লক্ষ্য ও আদর্শে উজ্জীবিত গণমানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। 
 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত প্রচার ও মাঠপর্যায়ের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব মিলে একটি শক্তিশালী এবং নিয়ন্ত্রিত আন্দোলন গড়ে তোলে। "গণতন্ত্র চাই", "ভোটাধিকার ফেরত চাই", "নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার চাই"; এমন সব দাবিতে মুখরিত হয় রাজপথ। 
 
সরকার প্রথমে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করে। পুলিশি দমন-পীড়ন, ছাত্রদের গ্রেপ্তার, মামলা, গুম-খুনের আশঙ্কা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা দমে যায়নি। বরং দমন নীতির প্রতিবাদে দেশের আরও বেশি মানুষ রাজপথে নামে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, লেখক-শিল্পীরা প্রকাশ্যে একাত্মতা ঘোষণা করেন। 
 
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়ে, পশ্চিমা গণমাধ্যমসহ জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। 
 
জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন একটি সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যায়, যখন ছাত্রদের ওপর চালানো সহিংস হামলা ও কিছু মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসব ঘটনার পর আন্দোলনের ভিন্ন মাত্রা তৈরি হয়। 
 
একদিকে প্রশাসনিক নিষ্ঠুরতা, অন্যদিকে জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ; এই দুই বিপরীতমুখী শক্তির সংঘর্ষ থেকেই জন্ম নেয় এক নতুন রাজনৈতিক চেতনা। 
 
শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন শুধু সরকারকে নয়, গোটা জাতিকেই এক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়: গণতন্ত্র কি শুধুই নির্বাচন? নাকি তা এক চেতনা, এক সম্মিলিত জীবনের অধিকার? 
 
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই দেশজুড়ে তৈরি হয় আলোচনার জোয়ার। সরকারের নীতিনির্ধারকদের একাংশ এই জনমতকে সম্মান জানিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খোঁজে। 
 
যদিও জুলাই আন্দোলনের তাৎক্ষণিক ফলাফল সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়নি, তবে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলের সূচনা করেছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটেছে, তার ঢেউ আগামী দিনের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। 
 
আজ, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকালে আমরা বুঝি— ২০২৪ সালের জুলাই ছিল কেবল একটি মাস নয়, ছিল এক সংগ্রামের প্রতীক। এক বিশুদ্ধ গণআকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে, প্রয়োজন হলে তারা ইতিহাস গড়তে জানে, এবং সেই ইতিহাস প্রতিবারই আমাদের শেখায়; গণতন্ত্রের বীজ যতবারই পায়ে দমন করার চেষ্টা হয়, ততবারই তা আরও গভীর শিকড় গেঁথে জেগে ওঠে। 
 
 
লেখক: ইরফান ইবনে আমিন পাটোয়ারী, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : স্টাফ রিপোর্টার, ডেস্ক-০১

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
সীমান্তে নৃশংসতা: বাংলাদেশিদের গুলি নয়, এবার অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যা করছে বিএসএফ

সীমান্তে নৃশংসতা: বাংলাদেশিদের গুলি নয়, এবার অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যা করছে বিএসএফ