আইএফআইসি আমার বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক ইস্যুর ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবস্ক্রিপশনের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে তাদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেকে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে। গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ৯৬৫তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কমিশন সভা শেষে বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক দেড় হাজার কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও এক হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই এর সম্মতিপত্র ইস্যু হয়। বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড। যেটি ওই বছরের ২ মার্চ নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিবন্ধিত হওয়ার পর পরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয় বা উন্নয়ন-সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়া বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) এ বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার)। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কমিশন আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি ও ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান এফ রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার পাশাপাশি তাদের দুজনকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত এবং তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পুঁজিবাজারে পাঁচ বছরের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এআরএম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া ওই বন্ড-সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) ৩ হাজার কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টিবল অর রিডিমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুকের প্রস্তাব ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত কমিশনের ৭৭৯তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবিত গ্রিন সুকুকটি ২ হাজার ২৫০ কোটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের (৭৫০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের ব্যতীত অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে) মাধ্যমে এবং ৭৫০ কোটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইস্যুর জন্য অনুমোদিত হয়। এ সুকুকের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বর্ধিতকরণ এবং তার দুটি সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প তিস্তা সোলার লিমিটেড (২০০ মেগাওয়াট) ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে (৩০ মেগাওয়াট) ব্যবহার করে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কথা ছিল। ওই সুকুকের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ছিল ১০০ টাকা, ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা।
এ সুকুকের অরিজিনেটর হিসেবে বেক্সিমকো, ইস্যুয়ার বা ট্রাস্ট/এসপিভি হিসেবে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল-ইস্তিসনা, ট্রাস্টি হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড ও অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এম জে আবেদিন অ্যান্ড কো., চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল) দায়িত্ব পালন করেছে।
সুকুক ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিধিমালার কিছু বিধি থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডকে কমিশন কর্তৃক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০২১ সালের ২৩ জুন সুকুক ইস্যুর আবেদন অনুমোদন দেয় কমিশন। ওই বছরের ৮ জুলাই কমিশন কর্তৃক সম্মতিপত্র বা কনসেন্ট লেটারও ইস্যু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে ওই সুকুকের পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের সময়সীমা ২৩ আগস্ট ২০২১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমাও হয়েছে।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার কারণে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়ছে বিএসইসি।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ‘পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড এবং বেক্সিমকোর সুকুক-সংক্রান্ত ইস্যুতে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের সংশ্লিষ্টদের পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত করার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ দুই ইস্যুতে আরো পক্ষ ও ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রবেশ করতে পারবেন না কিংবা এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বে আসতে পারবেন না। তবে পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পর্ষদ কিংবা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকতে পারবেন কিনা কিংবা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন করতে পারবেন কিনা সেটির আইনি দিক খতিয়ে দেখে বিএসইসির আদেশে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদপত্রে কলাম লেখা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টকশোতেও অংশ নিতে পারবেন না।’ সিকিউরিটিজ আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অবাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরাসরি কোথাও বলা নেই, তবে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে তাদের অবাঞ্ছিত করার সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
১৯৯৬ ও ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের ঘটনায় সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের ঘটনায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সালমান এফ রহমানের বিষয়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উঠে এসেছিল। প্রতিবেদনে সালমান এফ রহমানের বিষয়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু, প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু ও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি উঠে আসে। জিএমজি এয়ারলাইনসের ৬০ কোটি টাকার শেয়ার প্লেসমেন্টে ৩০০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। জিএমজি এয়ারলাইনসের আইপিওর তথ্যপত্রে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর যথার্থতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তদন্ত কমিটি। এক্ষেত্রে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দেখানোর জন্য কোম্পানিটি সম্পদের মূল্য, আয়, ব্যয় ও মুনাফার তথ্যের ক্ষেত্রে কারসাজি করেছিল বলে মনে করেছিল কমিটি।
একই গ্রুপের ছয়টি কোম্পানির ঋণ পরিশোধের জন্য ২০০৯ সালের আগস্টে ৬৩৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ১২ টাকার শেয়ার ইস্যু করে বেক্সটেক্স লিমিটেড। ঋণের বিনিময়ে শেয়ারপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো হচ্ছে নিউ ইংল্যান্ড ইকুইটি লিমিটেড, বেক্সিমকো লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিকস, বাংলাদেশ অনলাইন লিমিটেড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেড। এর মধ্যে নিউ ইংল্যান্ড ইকুইটির মালিক সাহাবুব আলম। যিনি সালমান এফ রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। বাকি কোম্পানিগুলোর মালিকানায় ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ।
বিএসইসির সাবেক সদস্য সাহাবুব আলম প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু ও প্রাইভেট প্লেসমেন্ট পদ্ধতির পরামর্শক ও তদবিরকারী বলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ব্রোকার-ডিলারদের প্রতিনিধিরা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে বেক্সটেক্স লিমিটেডের ঋণকে শেয়ারে রূপান্তরের ক্ষেত্রে যেসব নথিপত্র জমা দিয়েছিল সেখানে কোম্পানিটির হিসাবপত্রে যথেষ্ট গরমিল পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার লেনদেন ও পরিচালনায় সালমান এফ রহমানের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে কমিটি সুপারিশ করেছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকারের সময়ে এসব সুপারিশ মানা হয়নি। বরং ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর সালমান এফ রহমান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকে রাষ্ট্রীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে লুটে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৩ আগস্ট সালমান এফ রহমান ও চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শিবলী রুবাইয়াত গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্যদিকে বিদেশে অবস্থানরত আহমেদ শায়ান এফ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘যে দুটি বন্ডের বিষয়ে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এর প্রভাব শুধু পুঁজিবাজারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখানে আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ জড়িত, এ ধরনের একটি বন্ডে ব্যাংক কেন গ্যারান্টি দিল, তাদের কি কেউ এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে? কিংবা যারা এসব বন্ড কিনেছে তাদের সেটি কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাছাড়া আইএফআইসি গ্যারান্টেড বন্ডটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কী বিবেচনায় এটি অনুমোদন করেছে সেটাও জানা প্রয়োজন। বিএসইসির তদন্ত কমিটি এক্ষেত্রে বন্ড দুটির যে বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করেছে সেটি একটি অংশ। এখানে আরো অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। ফলে বিএসইসির পক্ষ থেকে যে কমিটি করা হয়েছিল, তাদের পক্ষে এসব বিষয় দেখা সম্ভব নয়। আমার মতে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির যৌথভাবে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনো শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে আইনি ভাষা ব্যবহার করতে হবে, অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার মতো রাজনৈতিক ভাষা নয়। বিএসইসি কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যেকোনো সরকারি সংস্থা যখন একটি ভাষা ব্যবহার করবে তখন সেটি আইনের সংজ্ঞার মধ্যে আসতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে অবাঞ্ছিত করা মানে কি সেটি বলতে হবে। সিকিউরিটিজ আইনের কোথাও না কোথাও তো অবাঞ্ছিত করার বিষয়টি সংজ্ঞায়িত থাকতে হবে। সেটি কি আছে? যদি না থাকে তাহলে তো আপনি ইচ্ছামতো একটি ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না।’