দেশের রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের দাবি তুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ আর আগের শাসন ব্যবস্থায় ফিরতে চায় না। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলই তার প্রমাণ, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদী চর্চার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
রোববার খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় অডিটরিয়ামে শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতির নামে শিক্ষার্থীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে। এমনকি দলীয় দ্বন্দ্বে সহিংসতা ও হত্যার ঘটনাও ঘটে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সনি, আবরার, আবু বকর ও শরিফুজ্জামান নোমানীর মতো অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্রের পরাজয় ঘটিয়েছে।
অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, জনগণ কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান চায়। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, জবরদখল ও রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নে অতিষ্ট মানুষ আজ পরিবর্তনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তার দাবি, জনগণ ঘুরে দাঁড়ানোয় স্বাধীন মতপ্রকাশ ও গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা আবারও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পুরোনো শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরানোর সুযোগ জনগণ দেবে না। প্রয়োজনে সেটিকে লালকার্ড দেখানো হবে।
তিনি আরও জানান, জুলাই সনদে বর্ণিত আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন অপরিহার্য। তার মতে, সংবিধানের কিছু ধারা স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ দিয়েছে, যা অতীতে দমন-নিপীড়নকে বৈধতা দিয়েছে। তিনি প্রস্তাব করেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের ভিত্তিতে পিআর (প্রোপোর্সনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। তবেই সম্ভব একটি কল্যাণভিত্তিক ও জনমুখী বাংলাদেশ গঠন।
দিনব্যাপী তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সভায় মতবিনিময় করেন এবং কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করেন। পাশাপাশি স্থানীয় ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সুস্থতা কামনা করেন। এসব আয়োজনে জামায়াতের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।