মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্ত ২৮ জনকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে এখনো নিখোঁজদের সন্ধান ও গুম কমিশনের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি তুলেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) হাইকোর্ট ভবনের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার দাবিতে পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মালেক, গুমের শিকার খালেদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা শারমিন সুলতানা, ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা পারুল, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলো এখনো গুম কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাচ্ছেন না।
আবদুল মালেক বলেন, “গত ১৫ বছর ন্যায়বিচারহীনতার মধ্যে কেটেছে। এখনো গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা আশাহত হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।” সৈয়দা শারমিন সুলতানা জানান, তিনি এখন নিজের পরিচয় দিতে দ্বিধায় পড়েন, কারণ সবাই তাকে “গুম খালেদের স্ত্রী” হিসেবেই চেনে।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, “গুমের শিকার পরিবারগুলোর কণ্ঠ আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছালেও দেশের সরকার এখনো তাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। গুম কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ খুবই সীমিত।” তিনি অভিযুক্ত ২৮ জনের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যেমন র্যাব, ডিবি, এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর কিছু সদস্য রাজনৈতিক স্বার্থে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
২. এখনো নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান প্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
৩. সব রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে পেশাদার, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
৪. গোপন বন্দিশালার প্রমাণ নষ্টে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা।
৫. গুম কমিশন, ট্রাইব্যুনাল ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৬. বিদেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, বিচারের আশায় বছরের পর বছর পার করলেও এখনো কেউ দায় স্বীকার করেনি, বরং অধিকাংশ সময় তারা প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যে আটকে আছেন। তাদের প্রত্যাশা, এই উদ্যোগের মাধ্যমে অবশেষে রাষ্ট্র ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে আসবে।