সভা চলাকালেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হঠাৎ মিলনায়তন ত্যাগ করেন। পরে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আচরণবিধি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্ন থাকলেও নির্বাচন কমিশন সীমিত সুযোগ দিয়েছে। তাই আমরা সভা বর্জন করেছি।
সভায় শিক্ষার্থীরা নির্বাচন সুষ্ঠু করার পথ, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অংশগ্রহণ, অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা, ডোপ টেস্ট, সাইবার সেলের প্রয়োজনীয়তা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে মতামত দেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্তরসূরিরা কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে? আচরণবিধি ও গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
বাগছাস নেতা আশরাফ চৌধুরী বলেন, ৯ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে আছেন। এ পরিস্থিতিতে আচরণবিধি নিয়ে সভা করা কতটা যৌক্তিক?
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আহমেদ বলেন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু নাও হতে পারে। শিক্ষার্থীদের দাবি কি আপনাদের কাছে পৌঁছেছে? প্রক্টরের পদত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কি? প্রধান নির্বাচন কমিশনার জবাবে বলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে, তবে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ডোপ টেস্টে শুধু প্রস্রাব নয়, রক্ত পরীক্ষাও কার্যকরভাবে করা উচিত। অন্য শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রহনন ঠেকাতে সাইবার সেল গঠন করা হবে কি না এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতটা সক্ষম হবে। সভা শেষে অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও প্রস্তাবগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে।
খসড়া আচরণবিধির মূল দিক : খসড়া আচরণবিধিতে মোট ১৭টি বিধান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিধিগুলো হলো; মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে না। মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ব্যবহার করে প্রচারণা নিষিদ্ধ। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও অনুমোদিত ব্যক্তিদের বাইরে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তবে প্রার্থীর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সংক্রান্ত বিধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শিক্ষার্থীরা মনে করিয়ে দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে এ নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছিল। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দেন, প্রার্থীর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সংক্রান্ত বিধিটি আপাতত প্রত্যাহার করা হলো। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ মতবিনিময় সভায় একদিকে ছাত্রদলের বর্জন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক প্রশ্ন উত্তরে আলোচনায় উত্তাপ ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, শিক্ষার্থীদের সব মতামত বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে।