পানি (ماء, Water) আল্লাহর এক অনন্য নেয়ামত। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর টিকে থাকার জন্যই পানি অপরিহার্য। তবে ইসলাম শুধু পানি পান করার অনুমতি দেয়নি; বরং কীভাবে, কখন, কোন আদবে পানি পান করতে হবে সে ব্যাপারেও বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জীবনে পানি পানের এমন কিছু সুন্নাহ দেখিয়ে গেছেন, যা মেনে চললে তা হবে ইবাদত, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং নৈতিক শৃঙ্খলার প্রতীক।
পানি খাওয়ার সুন্নাহ-
১. ডান হাতে পানি পান করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“তোমরা ডান হাতে খাও এবং ডান হাতে পান কর।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২০২০)
২. বসে পানি পান করা
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত—
“রাসূলুল্লাহ ﷺ বেশিরভাগ সময় বসে পান করতেন।”
(সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮৮১)
৩. তিনবারে পানি পান করা
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন—
“রাসূলুল্লাহ ﷺ তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন— এভাবে পান করা অধিক তৃপ্তিদায়ক, অধিক স্বাস্থ্যকর ও অধিক আরামদায়ক।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
৪. শ্বাস ফেলার জন্য পাত্র থেকে মুখ সরানো
নবী ﷺ বলেছেন—
“তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পাত্রের ভেতরে শ্বাস না নেয়।”
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ১৫৩)
৫. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা ও আলহামদুলিল্লাহ বলে শেষ করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“আল্লাহ তাআলা পানাহারকে বরকতময় করেছেন, তাই যে পান করবে সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করে এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শেষ করে।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৩০)
৬. কাঁচ বা মাটির পাত্র ব্যবহার করা উত্তম
রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁচ, মাটি বা চামড়ার মশকে পানি পান করতেন।
(সহীহ বুখারি, হাদিস: ৫৬১৩)
পানি পানের পরের দু’আ-
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ سَقَانَا عَذْبًا فُرَاتًا بِرَحْمَتِهِ وَلَمْ يَجْعَلْهُ مِلْحًا أُجَاجًا بِذُنُوْبِنَا
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর রহমতে আমাদেরকে সুপেয় মিষ্টি পানি পান করালেন এবং আমাদের পাপের কারণে একে লবণাক্ত ও তিতা বানালেন না।”
(সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৫)
দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্ব-
১) ধীরে ধীরে, তিনবারে পানি পান করলে শরীর ও পাকস্থলীর জন্য উপকারী।
২) ডান হাতে খাওয়া-পান করা ইসলামী সৌজন্যের প্রতীক।
৩) বিসমিল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ বললে সাধারণ কাজটিও ইবাদতে রূপ নেয়।
৪) সুন্নাহ পালন করা মানে সরাসরি রাসূল ﷺ এর শিক্ষা অনুসরণ করা।
পানি পান করা শুধুই শারীরিক প্রয়োজন নয়, বরং এটি সুন্নাহর আদব মানলে ইবাদতের অংশ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষা অনুযায়ী পানি পান করলে মানুষ কেবল শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে না, বরং আধ্যাত্মিকভাবেও উপকৃত হয়। তাই প্রতিদিনের সাধারণ কাজকেও বরকতময় ইবাদতে রূপান্তরিত করতে আমাদের উচিত পানি পানের সুন্নাহ মেনে চলা।