বিয়ে মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সঠিক পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের মাধ্যমে আসে সুখ ও শান্তি। ভুল সিদ্ধান্ত হলে তা হয়ে দাঁড়ায় দুঃখ-কষ্টের কারণ। বিয়েতে বয়সের পার্থক্য একটি আলোচিত বিষয়। ইসলামে বয়সের ব্যবধান নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কুরআন-হাদিসে বয়সের ভারসাম্যের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং সাহাবাদের জীবনে বয়সের ব্যবধানের বিভিন্ন দৃষ্টান্তও বিদ্যমান।
প্রাচীন যুগে বড় বয়সের পার্থক্য নিয়েও বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। যেমন নবীজি (সা.)-এর নাতি হুসাইন (রা.)-এর স্ত্রী আতিকা (রা.) তাঁর চেয়ে ২৬ বছরের বড় ছিলেন। একইভাবে জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-এর স্ত্রী উম্মে আইমান (রা.) তাঁর চেয়ে অন্তত ২০–৩০ বছরের বড় ছিলেন। নবীজি (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.) ছিলেন তাঁর চেয়ে প্রায় ১৫ বছরের বড়। এ দৃষ্টান্তগুলো থেকে বোঝা যায়, ইসলামে বয়সের পার্থক্য কোনো বাধা নয়।
তবে হাদিসে বয়সের কাছাকাছি হওয়াকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন: “নবীজি (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বিয়ে করেছো কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, অকুমারী। তিনি বললেন, কুমারী হলে তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭৫৬)
একইভাবে, যখন আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) নবীজি (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর জন্য প্রস্তাব দেন, তিনি তা নাকচ করেন এবং বলেন: “সে অনেক ছোট।” (ইত্তিহাফুস সায়েল, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৬)
এ থেকে বোঝা যায়, বয়সের ভারসাম্য দাম্পত্য জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কুরআনেও সমবয়সী সঙ্গিনীর বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ বলেন: “(জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না।” (সুরা সাদ: ৫২)
আরও বলেন: “আমি তাদের করেছি চিরকুমারী, সোহাগিনী, সমবয়স্কা।” (সুরা ওয়াকিয়া: ৩৫-৩৮)
সব মিলিয়ে ইসলামে বয়সের ব্যবধান বৈধ হলেও উত্তম হলো কাছাকাছি বয়সে বিয়ে করা। স্বামীর বয়স স্ত্রীর চেয়ে কিছুটা বেশি হলে দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্বতার কারণে দাম্পত্য জীবনে ভারসাম্য আসে। আর কাছাকাছি বয়স হলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বোঝাপড়া ও মানসিক সামঞ্জস্যও আরও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে। ফলে সংসার টিকে থাকে শান্তি, ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান: কুরআন-হাদিসের আলোকে দৃষ্টান্ত
- আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১০:১৮:২৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১০:১৮:২৪ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ