২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা। ছাত্র-জনতা তখন বিভিন্ন দিক থেকে ঢাকার চানখারপুল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিল গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচিতে অংশ নিতে। কিন্তু সেখানেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। শুরু হয় গুলি। আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই ভয়াল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক আজহার লিমন।
আজহার লিমনের ভাষ্য অনুযায়ী, গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কনস্টেবল সুজন ছিলেন সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। শুরুতে তার হাতে ছিল টিয়ার গ্যাস লঞ্চার, পরে তাকে একজন সহকর্মী চাইনিজ রাইফেল হস্তান্তর করেন। এরপরই তিনি একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকেন আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে। আজহার বলেন, "আমি নিজ চোখে দেখেছি, সুজন একজন যুবককে গুলি করে হত্যা করে। গুলি খেয়ে ছেলেটা কলাগাছের মতো মাটিতে পড়ে যায়। এরপরও গুলি থামেনি। বরং দেখলাম, সুজন গুলি করার পর ভিডিও কলে কারও সঙ্গে কথা বলছিল। তার মধ্যে কোনো অনুশোচনার ছাপ ছিল না।"
লিমন জানান, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আশরাফুজ্জামান এবং এডিসি আখতার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে কে গুলি করবে, তা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। গুলির সময় সুজনকে কেউ একজন অস্ত্র দিয়ে উৎসাহিত করছিল, যেন তিনি আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গুলি চালাতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, “আমার প্রতিবাদ শুনে এক পুলিশ সদস্য অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকায়। পরে বিবিসি বাংলার আজাদ ভাই এবং যমুনা টিভির মনিরুল ভাই আমাকে সরিয়ে নিয়ে যান। এরপর আমরা শাহবাগ থানার দিকে গেলে দেখি, সেখানে আর্মিরা ছাত্রদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।”
আজহার লিমনের বিবরণ সেই দিনকার নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তির নগ্ন ব্যবহারের ভয়াবহ প্রতিফলন। সেদিনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত কনস্টেবল সুজন বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা মামলার আসামি বলেও জানা গেছে।