চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বর্বর নির্যাতনের আরেকটি বিভীষিকাময় চিত্র সামনে এসেছে। এবারের ঘটনায় গুলি নয়, বরং নির্যাতন, দাঁত ভাঙা, অ্যাসিডে পোড়ানো এবং লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
২ আগস্ট বিকেলে পদ্মা নদী থেকে দুজন বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। তারা হলেন শফিকুল ইসলাম (৪২) ও সেলিম রেজা (৩২)। উভয়ের শরীরে ছিল অ্যাসিডদগ্ধ পোড়া দাগ, ফোস্কা, দাঁতের ক্ষতচিহ্ন ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিএসএফ সদস্যরা নির্যাতনের পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
শফিকুলের ভাই অভিযোগ করেন, “শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল কেউ জ্যান্ত অবস্থায় পুড়িয়ে দিয়েছে। দাঁত পর্যন্ত উপড়ে ফেলেছে। এটা কেবল গুলি নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যা।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তে গরু ব্যবসার কথা বলে তাদের ভারতে নেওয়া হয়। এরপর বিএসএফ তাদের ধরে ফেলে এবং নির্মম নির্যাতন চালায়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে পদ্মা নদীতে। একইদিনে নিখোঁজ হন রুহুল আমিন নামের আরেক ব্যক্তি, যিনি এখনো নিখোঁজ।
বদলে যাচ্ছে বিএসএফের হত্যার কৌশল:
সীমান্তে গুলি করে হত্যা যেন আগের বিষয় হয়ে গেছে। এখন পরিবর্তিত পন্থায় বাংলাদেশিদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে—মারধর, বৈদ্যুতিক শক, দাঁত ভেঙে ফেলা, ও সর্বশেষ অ্যাসিড ব্যবহার। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এ ধরনের বর্বরতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন।
এক মাসে চার লাশ:
জুলাই-আগস্টে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তেই কমপক্ষে ৪ জন বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে পদ্মা নদী থেকে। তাদের প্রত্যেকের শরীরে পচন, পোড়া ও নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র, সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় বসবাসকারী যুবক, যারা বিভিন্ন প্রলোভনে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবাদ:
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। 'অধিকার' এবং 'বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট' দাবি করেছে, সীমান্ত হত্যা রোধে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নতুনভাবে শুরু করা উচিত।
প্রশাসনের নীরবতা ও পরিবারের আহাজারি:
নিহতদের পরিবার প্রশাসনের সহযোগিতার আহ্বান জানালেও এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা বা আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ভয়, আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে।