বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সমুদ্র সম্পদ আহরণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। পর্যটন, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে কোনো বড় ধরনের অর্জন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পরিকল্পনার অভাব ও দক্ষ জনবলের সংকট এর প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানায়, গবেষণা জাহাজ না থাকায় গভীর সমুদ্রের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে ফিশিং ট্রলার ব্যবহার করেই উপকূলীয় এলাকায় গবেষণা চালিয়ে আট ধরনের ভারী খনিজ শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য সি আর্চিন এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনে কাজে লাগতে পারে এমন রাজকাঁকড়ার সন্ধান মিলেছে।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কমডোর মো. মিনারুল হক জানান, ব্লু ইকোনমি উন্নয়নে ২৮টি পরিকল্পনার আওতায় ৫৫টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপকূল ও অগভীর সমুদ্র এলাকায় প্রায় ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় খনিজ অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সিলিকন, মাইকা প্রভৃতি বিরল খনিজ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ১৪৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলোর অন্তত ১০টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিন ধরনের শৈবাল থেকে এগার, ক্যারাজিনান ও এলজিনেট উপাদান পাওয়া গেছে, যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য।
এছাড়া পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ঢেউ, স্রোত ও অন্যান্য প্যারামিটার বিশ্লেষণ করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাই করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিনের প্রবালের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং ৬০ প্রজাতি নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে—সি আর্চিন থেকে ক্যানসার চিকিৎসার উপাদান, মেরিন ফিশ থেকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, জেলিফিশ থেকে সার ও কসমেটিক্স তৈরির উপাদান।
তবে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে গবেষণা জাহাজ ও দক্ষ জনবলের অভাব। এ বিষয়ে কমডোর মিনারুল হক বলেন, একটি গবেষণা জাহাজ কেনা ও ৩৯৮ প্রকার বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। আশা করা হচ্ছে আগামী দুই বছরের মধ্যে জাহাজ ও সরঞ্জাম সংগ্রহ সম্পন্ন হবে।