দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক ভয়াবহ অনিয়ম ও অনৈতিক চর্চা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসকদের নানারকম উপঢৌকন দিয়ে নিজেদের পণ্যের প্রেসক্রিপশন নিশ্চিত করছে। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের ওপরও তৈরি হচ্ছে গুরুতর হুমকি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসব উপঢৌকনের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, টিভি, এসি, নগদ অর্থ, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এবং বাসা-বাড়ির আসবাব পর্যন্ত। এমনকি কারো কারো সন্তানদের বিয়ের খরচও বহন করছে কোম্পানিগুলো। এসব সুবিধা পেতে ডাক্তারদের অনেকেই নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখতে বাধ্য হচ্ছেন, যার অনেকগুলো মানহীন বা অপ্রয়োজনীয়।
এ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এ ধরনের অনৈতিক চর্চা রোগীদের বিশ্বাসহানি ঘটাচ্ছে এবং বাড়িয়ে দিচ্ছে চিকিৎসার খরচ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ডাক্তারদের একটি বড় অংশ তাদের দায়িত্ব ও পেশাগত নৈতিকতা থেকে সরে গিয়ে কমিশনের লোভে রোগীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন অপ্রয়োজনীয় ওষুধের বোঝা।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন উপহার সরবরাহ করেন। এমনকি কিছু চিকিৎসক তাদের কাছে উপঢৌকন না পেলে প্রেসক্রিপশনেই ওষুধের নাম না লেখার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলেও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে স্বল্পমেয়াদি একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়নের জন্য বৈঠক হবে এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ওষুধ মার্কেটিংয়ে এমন বেপরোয়া আচরণ বন্ধ না হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অনৈতিক এই প্রতিযোগিতায় বিদেশি কোম্পানিগুলোও ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে, যা দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে।
স্বাস্থ্যসেবায় নীতিগত ও প্রশাসনিক নজরদারি জোরদার না হলে এই চক্র ভাঙা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা দাবি করেছেন, বিএমডিসি, ঔষধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপেই কেবল এ অরাজকতার অবসান ঘটানো সম্ভব।