বিয়ে বা পরিচয় মিলানোর ক্ষেত্রে “কুফু” (কুফুয়াত) একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ধারণা, বিশেষ করে বিয়ে নিশ্চিতের জন্য। নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা, শাব্দিক অর্থ, হাদিস, এবং ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি মিলিয়ে দেয়া হলো, যাতে সহজে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা যায় ইন শা আল্লাহ।
কুফু (কুফুয়াত) কি?
আরবি “কুফু” শব্দের অর্থ সমান অধিকার, যোগ্যতা বা সাম্যের মিল। ইসলামে কুফু বলতে বোঝানো হয় পাত্র ও পাত্রীয়ের মধ্যে সামাজিক, নৈতিক, আর্থিক ও ধর্মীয় মিল বা সামঞ্জস্যতা যাতে বিবাহ সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
কেন কুফু জরুরি?
-
ইসলামী বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন, যেখানে দুই পরিবারের সম্মতি ও সামাজিক সাম্য জরুরি।
-
পাত্র-পাত্রীয়ের মধ্যে সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মিল না থাকলে বিবাহের পর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
কুফু থাকার মানে হলো পরিবার, ধর্মীয় অবস্থান, শিক্ষাগত ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামঞ্জস্য বজায় থাকা।
কুফু নিয়ে হাদিস ও ইসলামী বর্ণনা
১. হাদিস:
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“বিয়ের জন্য তোমরা পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করো তাদের ধর্ম ও চরিত্রের ভিত্তিতে। যদি তা থাকে, তোমরা সাফল্য পাবে। আর যদি তা না থাকে, তখন তোমার হাত গড়িয়ে পড়বে।”
(তিরমিযি, নাসাঈ)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ধর্মীয় এবং নৈতিক দিক থেকে মিল থাকা অত্যন্ত জরুরি।
২. ইসলামী ফিকহের মতামত:
ফকিহরা বলেছেন, পাত্র-পাত্রীয়ের মধ্যে কুফু থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে:
-
ধর্মের দিক থেকে মিল থাকা, অর্থাৎ উভয় পক্ষই ধর্মপ্রাণ হওয়া।
-
সামাজিক মর্যাদা ও নৈতিক গুণাবলীতে সামঞ্জস্য।
-
আর্থিক অবস্থানে অতি বড় পার্থক্য এড়ানো।
কুফুর ধরণ ও বিষয়
-
ধর্মীয় কুফু: উভয় পক্ষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনে মিল থাকা।
-
সামাজিক কুফু: পারিবারিক মর্যাদা, সামাজিক অবস্থা ও অভিজ্ঞতায় সামঞ্জস্য।
-
নৈতিক কুফু: চরিত্র ও আচরণে সমতা।
-
অর্থনৈতিক কুফু: আর্থিক অবস্থা ও স্বাবলম্বিতার তুলনা।
কুফু না থাকার ক্ষেত্রে:
-
অনেক সময় একদিকের পরিবার কুফু না থাকলেও বিবাহ করতে চায়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি ধর্ম ও নৈতিকতা মিলে তাহলে বিবাহ বৈধ।
-
তবে পরিবারের সম্মতি ও বিবাহের সফলতার জন্য কুফু থাকা উত্তম ও সুপারিশকৃত।
-
কুফু না থাকলে বিবাহের পর ঘরোয়া অশান্তি ও বিবাদ হতে পারে।
কুফু নিয়ে কথা বলার সময় কীভাবে বোঝানো যায়?
-
শালীন ও বিনম্র ভাষায়: “বিয়ে করার আগে আমাদের উচিত দুজনের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক দিকগুলো যেন একে অপরের সাথে মানানসই হয়। এটা এক ধরনের সম্মতি বা ‘কুফু’ যার মাধ্যমে জীবন সঙ্গী হিসাবে সুখী থাকা সহজ হয়।”
-
উদাহরণ দিয়ে বোঝানো: “যেমন যদি একজন অত্যন্ত ধার্মিক হন আর অন্যজন পুরোপুরি আলাদা জীবনযাপন করেন, তাহলে জীবনের পথে অনেক কষ্ট হতে পারে। তাই কুফু থাকার মানে হলো পারস্পরিক সামঞ্জস্য থাকা।”
-
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে: “নবী (সা.) বলেছেন, বিবাহে ধর্ম ও চরিত্র মিলানো উত্তম।”
কুফু হচ্ছে দাম্পত্য জীবনের সফলতা নিশ্চিত করতে পাত্র-পাত্রীয়ের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক সামঞ্জস্যতা। এটি ইসলামী বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, যা বিবাহিত জীবনে শান্তি ও পরস্পরের সম্মান বজায় রাখতে সহায়ক।