জাম্বিয়ায় ৫২ বছর পর দূতাবাস উদ্বোধনের সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার ঘোষণা দেন, “জাম্বিয়ায় ফিরছে ইসরায়েল, আফ্রিকায় ফিরছে ইসরায়েল।” বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ যেখানে গাজার ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে, সেখানে জাম্বিয়া বা দক্ষিণ সুদানের মতো দেশকে পাশে টানতে চাইছে তেলআবিব।
ইসরায়েলের কূটনীতিকদের সাম্প্রতিক সফরে নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ সুদানের পাশাপাশি সোমালিল্যান্ডের নামও এসেছে। সেখানে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনার আভাস পাওয়া গেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে সোমালিল্যান্ডের জনগণ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৫০-৬০-এর দশকে নবস্বাধীন আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল ইসরায়েল। কিন্তু ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সেই সম্পর্ক প্রায় ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে কিছু দূতাবাস পুনরায় খোলা হলেও আফ্রিকায় প্রভাব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় দেশটি। বর্তমানে ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান ও জাম্বিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয় হয়েছে ইসরায়েল।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সামরিক প্রযুক্তি বিক্রির মাধ্যমে আফ্রিকায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে ইসরায়েল। ‘মাশাভ’-এর সহায়তায় ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠানো হয়েছে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। একই সময়ে ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া ও রুয়ান্ডার মতো দেশগুলো ইসরায়েলি অস্ত্র কিনে আসছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েল আফ্রিকার আর্থিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কূটনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করছে। জাম্বিয়ার মতো ঋণখেলাপি দেশ বিনিয়োগের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছে, আর এই সুযোগকে কৌশলগত জয় হিসেবে দেখছে তেলআবিব।
তবে সমালোচকদের মতে, আফ্রিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে। তাই সরকারিভাবে সমর্থন পেলেও দীর্ঘমেয়াদে জনগণের প্রতিরোধই ইসরায়েলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে পারে।