বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলটির এই দ্বিমুখী তৎপরতা আসলে কৌশলগত পদক্ষেপ, যেখানে আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সক্রিয় রাখা হচ্ছে নির্বাচনের স্বার্থে।
জামায়াতের মূল দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সংখ্যানুপাতিক (PR) ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন। তবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও জামায়াত এই ইস্যুকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি ও সমমনা দলের সঙ্গে মতভিন্নতা থাকলেও বিষয়টি জামায়াত একধরনের রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত জনসভা, গণসংযোগ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালাচ্ছে জামায়াত। এতে কর্মীদের কার্যক্রম সচল থাকছে, একইসঙ্গে নির্বাচনী মাঠও প্রস্তুত হচ্ছে। ২৬ সেপ্টেম্বরের দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির পর নতুন কর্মসূচি আসার সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে।
জামায়াত নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও নির্বাচন প্রস্তুতি সমান্তরালভাবেই চলবে। নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম জানান, দাবি আদায়ের চেষ্টা চলবে, তবে এজন্য নির্বাচন ঠেকানোর পক্ষে নয় জামায়াত। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মানুষ এখন ভোট দিতে চায় এবং দল চায় সেই ভোট নিরপেক্ষ পরিবেশে হোক।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, পাঁচ দফা কোনো একক দলের দাবি নয়, এটি জনগণের দাবি। তাই আন্দোলন যেমন চলবে, নির্বাচনী প্রস্তুতিও অব্যাহত থাকবে।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনী তৎপরতায় সরাসরি যুক্ত হয়ে সমর্থকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তার ভাষায়, “আমরা বিজয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছি।”
জামায়াতের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কিছু সমমনা দল একই দাবিতে আন্দোলন করছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে নির্বাচন না হওয়ার হুমকি দিলেও বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া এসব দলের টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি—এ দুটি ধারা সমান্তরালভাবে চলার সম্ভাবনাই বেশি।