মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন— “জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)। কেয়ামতের দিনই প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে, আর যে আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। কিন্তু এই পার্থিব জীবন কেবলই ক্ষণস্থায়ী ভোগ ও ছলনা।
আমাদের সমাজে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার নামে নির্দিষ্ট দিন ধরে নানা আয়োজনের প্রচলন রয়েছে— যেমন তৃতীয় দিনে কুলখানি এবং চল্লিশতম দিনে চল্লিশা নামে বৃহৎ ভোজ। প্রশ্ন হলো, এসব আচার ইসলাম সমর্থন করে কি না?
ইসলামে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, নফল ইবাদত করা এবং তার সওয়াব পৌঁছানো প্রশংসনীয় আমল। তবে এ কাজের জন্য শরিয়তে কোনো নির্দিষ্ট দিন বা আনুষ্ঠানিকতার বিধান নেই; বরং যেকোনো সময় ব্যক্তিগতভাবে করা যায়। কিন্তু বর্তমানে এই আমলকে আনুষ্ঠানিক ও আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে রূপ দেয়া হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং অনুচিত আচরণে পরিণত হয়।
হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে— “আমরা দাফনের পর মৃতকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া এবং খাবারের আয়োজন করাকে ‘বিলাপ’ হিসেবে গণ্য করতাম।” (মুসনাদে আহমদ: ২/২০৪; ইবনে মাজাহ: ১৬১২)। এর পরিবর্তে ইসলাম গরিব ও অভাবীদেরকে খাবার খাওয়ানোকে বৈধ ও উত্তম পন্থা হিসেবে নির্দেশ করে, যেখানে সামাজিক মর্যাদাবানদের প্রাধান্য না দিয়ে অভাবগ্রস্তদের গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পৌঁছানোর বৈধ পদ্ধতিগুলো হলো—
-
ভালো কাজের আলোচনা করা: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা মৃতদের ভালো কাজের আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।” (আবু দাউদ: ৪৯০০)
-
দোয়া করা: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি ছাড়া— সদকায়ে জারিয়া, এমন উপকারী জ্ঞান, এবং সেই নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।” (মুসলিম: ১৬৩১)
-
দান-সদকা করা: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) তার মায়ের মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, তার পক্ষ থেকে সদকা করলে উপকার হবে কি না। তিনি উত্তর দেন, “হ্যাঁ।” তখন সাদ (রা.) একটি বাগান সদকা করেন। (বুখারি: ২৭৫৬)
-
কবর জিয়ারত করা: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে জিয়ারতের অনুমতি দিলাম। কেননা তা দুনিয়াবিমুখ করে এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।” (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১)
অতএব, ইসলাম মৃতের জন্য সওয়াব পৌঁছানোর সহজ ও সরল পদ্ধতি উৎসাহিত করে, কিন্তু কুলখানি, চল্লিশা ইত্যাদি নির্দিষ্ট দিন ধরে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের অনুমোদন দেয় না।