ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন এবং তা রক্ষা করার জন্য স্বামী–স্ত্রী উভয়কে নানা শিক্ষা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অকারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কাজগুলোর একটি।
তালাকের ভয়াবহতা কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—
“তোমরা তাদেরকে (স্ত্রীদের) ভালভাবে রাখবে অথবা সুন্দরভাবে বিদায় দেবে।”
(সূরা আল-বাকারা: 229)
এখানে আল্লাহ তাআলা বিবাহিত জীবনে সদাচরণ ও সুন্দর আচরণের ওপর জোর দিয়েছেন। তালাক কোনো খেলা নয়; বরং চূড়ান্ত ও চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত, যা কেবল তখনই নেওয়া উচিত যখন সম্পর্ক রক্ষা করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
“তালাক দু’বার পর্যন্ত দেওয়া যাবে; এর পর হয় সুন্দরভাবে রাখা অথবা সুন্দরভাবে বিদায় দেওয়া।”
(সূরা আল-বাকারা: 229)
এ আয়াত প্রমাণ করে, তালাকের সুযোগ সীমিত এবং এ বিষয়ে অবহেলা বা খামখেয়ালি আচরণ ইসলামে অনুমোদিত নয়।
তালাক সম্পর্কে হাদিসের সতর্কতা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“হালাল জিনিসগুলোর মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হলো তালাক।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: 2178)
এই হাদিসে স্পষ্ট বোঝা যায়, তালাক যদিও বৈধ, তবুও তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। এর মানে—কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেবল রাগ বা ছোটখাটো সমস্যার কারণে তালাক দেওয়া একজন মুসলিমের জন্য গর্হিত কাজ।
তালাকের সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি
তালাক শুধু দুজন মানুষের সম্পর্কের ইতি ঘটায় না; বরং তা সন্তানদের ভবিষ্যৎ, পরিবার ও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
-
সন্তানরা পিতামাতার ভালোবাসা ও দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়।
-
আত্মীয়তার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়।
-
সামাজিক অস্থিরতা ও মানসিক কষ্টের সৃষ্টি হয়।
ইসলামের পরামর্শ
ইসলাম তালাকের আগে ধৈর্য, আলোচনা, এবং সালিশের (মধ্যস্থতা) নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
“যদি তোমরা স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে অনৈক্য আশঙ্কা কর, তবে একজন সালিশ পুরুষের পক্ষ থেকে এবং একজন সালিশ স্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঠাও।”
(সূরা আন-নিসা: 35)
এতে বোঝা যায়, তালাক সর্বশেষ সমাধান; এর আগে পুনর্মিলনের চেষ্টা করাই উত্তম।
তালাক বৈধ হলেও তা অকারণে ব্যবহার করা ইসলামে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত। স্বামী–স্ত্রী উভয়ের উচিত ধৈর্য, ক্ষমা ও সহনশীলতা অবলম্বন করা, যাতে দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট থাকে এবং পরিবার ও সমাজ শান্তি পায়।