দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের আধুনিকায়ন, নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া। প্রস্তাবিত এই আইনটিতে একদিকে টেলিযোগাযোগের অপব্যবহার ঠেকাতে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, অন্যদিকে নাগরিক অধিকারের দিক থেকে যুগান্তকারী সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
বিভাগটি গত ৫ নভেম্বর তাদের ওয়েবসাইটে খসড়াটি উন্মুক্ত করে জনমত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, যা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিক—সবার জন্যই মতামত প্রদানের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত খসড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী করা। এতে টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, OTT প্ল্যাটফর্ম (যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, নেটফ্লিক্স), মোবাইল অপারেটর ও আইএসপিগুলোর জন্য নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
আইনটির খসড়ায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার মতো কর্মকাণ্ডে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার অপব্যবহার করলে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৯৯ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। এর মধ্যে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, সাইবার হামলা, স্যাটেলাইট বা জিপিএস সংকেত ব্যাহত করা, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রতারণা করাও অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া মিথ্যা বার্তা প্রেরণ, নেটওয়ার্কে হস্তক্ষেপ, অশ্লীল বা হুমকিমূলক বার্তা পাঠানো, বারবার ফোন করে বিরক্ত করা, কিংবা আড়িপাতা—এসব অপরাধের জন্য ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১ লাখ থেকে ৪৯ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “কোনো পরিস্থিতিতেই টেলিযোগাযোগ সংযোগ, সংশ্লিষ্ট সেবা বা ইন্টারনেট অ্যাকসেস বন্ধ, ব্যাহত বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না।” অর্থাৎ, ইন্টারনেট বন্ধের মতো পদক্ষেপ এখন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
যদিও এই আইনটি ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইনের সংশোধিত সংস্করণ, এতে অনেক নতুন ধারা যোগ হওয়ায় এটি এখন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “অশ্লীল, অপমানজনক বা বিরক্তিকর বার্তা”–এর মতো শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় আইন প্রয়োগে অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
এছাড়া কিছু অপরাধে অত্যধিক অর্থদণ্ড (যেমন ৯৯ কোটি টাকা পর্যন্ত) রাখায় তা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর বড় আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দিয়েছেন অংশীজনরা।
অন্যদিকে, সরকার বলছে—এই আইন কার্যকর হলে ওটিটি ও টেলিকম খাতে জবাবদিহি, নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নীতিমালা বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রগতি আসবে, যা নাগরিক সুরক্ষা ও ডিজিটাল স্বাধীনতা দুটিকেই ভারসাম্যে রাখবে।
ডেস্ক রিপোর্ট