বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে কারা জড়িত ছিলেন, তা তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ তথ্য তদন্তে উঠে এলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। রোববার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এ বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর।
ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন, তখন থেকে তাঁর গুমের রহস্য অমীমাংসিত থেকে গেছে। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনাতেই গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটত। এমনকি ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনের বিভিন্ন তথ্য নিজেই পর্যবেক্ষণ করতেন বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে শেখ হাসিনার ‘ফার্স্টহ্যান্ড নলেজ’ ছিল।
চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার হাতে এমন ক্ষমতা ছিল যা দিয়ে তিনি প্রায় যেকোনো কিছু করতে পারতেন। এই ক্ষমতার অপব্যবহার ও দমননীতিই মামলার পটভূমি হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাও ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগ মুহূর্তেও বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অভিযুক্ত। এদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যুক্তিতর্কের সময় চিফ প্রসিকিউটর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামও উল্লেখ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের জন্য তাঁকে দায়ী করেন।
এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, বর্তমানে বিচারকদের জবাবদিহির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই, তাই ‘জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি কমিশন’ গঠন করা প্রয়োজন।
যুক্তিতর্ক চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়। ওই ফোনালাপে শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সালমান এফ রহমানকে অবিলম্বে বাসা ত্যাগের পরামর্শ দেন। কথোপকথনে সালমান জানতে চান ‘মার্শাল ল’ জারি হয়েছে কি না, জবাবে শেখ রেহানা বলেন, “এখন এসব নিয়ে ভাববেন না, ইউ শুড লিভ ইমিডিয়েটলি।”